রাঙামাটির অতি দুর্গম এলাকার বরকল উপজেলার এক গ্রামে তীব্র জ্বর, রক্তবমি, পেটব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া কমপক্ষে আরও ১০ জন এই রোগে উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।রোগটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। কিন্তু জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মেডিকেল টিম ইতোমধ্যে দুর্গম এই গ্রামে রওনা দিয়েছে।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে জানা যায়, বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের শুইছড়ি মৌজার চাঁন্দিনা ঘাট এলাকায় বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে জানুয়ারি মাস থেকে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তির মারা যায় জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে।
চাঁন্দিনাঘাট গ্রামের লবিন্দর চাকমা এবং স্নেহবালা চাকমার ছেলে পত্ত রঞ্জন চাকমা (২৫) প্রথম এই রোগে মারা যান। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বিমলেশ্বর চাকমা (৫৫), ২৬ ফেব্রুয়ারি ডালিম কুমার চাকমা (৩৫), ১৫ মার্চ চিত্তি মোহন চাকমা (৬০) মারা যান।
সর্বশেষ চলতি মাসের ১৭ তারিখ সোনি চাকমা নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশু মারা যায়। এলাকাটি অতি দুর্গম পাহাড়ি এলাকাতে হওয়ায় সেখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই এবং আশপাশে নেই কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র।
স্থানীয় কবিরাজির মাধ্যমে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে গ্রামবাসীরা মিলে একটি পুরনো বটবৃক্ষ কেটে ফেলে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস গাছটি একটি আধ্যাত্মিক গাছ এবং এই গাছ কাটার ফলেই এই রোগের উৎপত্তি।
বরকল উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো.ফোরকান এলাহি অনুপম এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বুধবার সকালে এই বিষয়ে একটি খবর পাওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এই বিষয়ে একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
তারা ঐখানে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।
এই বিষয়ে বরকল উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মং ক্যছিং সাগর বলেন, গত জানুয়ারি থেকে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টির ব্যাপারে জানতে পেরেছি। আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করে একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি।
যেটি আগামীকাল ঘটনাস্থলে পৌঁছাবে।
তিনি এই বিষয়ে আরও বলেন, এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে আমরা জ্বর, বমি, পেট ব্যথা, শরীর ব্যথার কথা জানতে পেরেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বলেছি, যারা অসুস্থ আছেন তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাতে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, “তীব্র জ্বর, পেটব্যথা, রক্তবমির উপসর্গ নিয়ে জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত পাঁচজন মারা গিয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। তবে এটা কোনো গুরুতর রোগ নয়। খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাদের এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় তারা সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসার বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ না থাকায় বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে তারা মারা যেতে পারে।
আমরা খবর পাওয়ার পর বুধবার থেকে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ওই গ্রামে পাঠিয়েছি। এলাকাটি যেহেতু খুবই দুর্গম তাই ওখানে পৌঁছাতেও বেশ সময় লাগছে।
ঐখানে পৌঁছানোর পর আমরা আক্রান্তকারীদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারব।
দৈনিক অর্থনীতি
Discussion about this post