শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠিকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি।
স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার কারণে শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার এবং ঐ শিক্ষার্থীকে সাহায্যকারী সহকারী অধ্যাপক প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেন।
এই ঘটনাকে উদ্দেশ্য করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। শনিবার(১৬ই মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামের স্বাক্ষর করা পৃথক চারটি অফিস আদেশে এই তথ্য জানান।
১৫ই মার্চ অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী তার বিরূদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুকে পাল্টা পোস্ট করেন।
আমান সিদ্দিকী তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সকলের কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্তটা জানার জন্য।
ঘটনার সূত্রপাত ০৪ আগস্ট,২০২২ সালে। একটা ফেইক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদ মূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নামও সেই টেক্সটের মধ্যে ছিল।
যখন এমন ম্যাসেজ সামনে আসছে আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালী থানায় যায়। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিল। পরবর্তীতে জিডি করা হয় এবং জিডি করে ফিরে আসার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেইক আইডিটা সে নিজে খুলেছে এবং অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এই কাজটি করেছে।
পরবর্তী দিন এসআই রুবেলকে, আইও (কোতোয়ালী থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক বন্ধু ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এস আই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এসআই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন। আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল কমিটি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।
অবন্তী এই ঘটনার পূর্ব পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা-মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সাথে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকী সময়টা যেন আমরা মিলে মিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান।
তারপর থেকে আমি অবন্তীকার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। এমনকি তার সাথে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি।
এখন আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে এতরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটা কাজ অবন্তী করবে।
তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন এবং আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন। আর একটা প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে, “মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিলো না?”
আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সাথে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিলো তারপরে থেকে তার সাথে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিল। এই ছিল আমার দিক থেকে সত্যি কথা। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরেছি। বিশ্বাস করা বা না করাটা একান্তই আপনাদের ওপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি।
একটি কথা বলে রাখা ভালো, এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তীকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তীকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিল যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন এইজন্য আমার ওপর তার ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধের কথা চিন্তা করে আজকের এই ঘটনা ঘটে।
আরো বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সঙ্গে শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে, স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সহরল মানুষ হিসেবেই চেনেন।
পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সকলকেই।
অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম।’
জানা যায় মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।