সরবরাহের নেই কোনো ঘাটতি, রয়েছে পর্যাপ্ত মজুদ তারপরও পাগলা ঘোড়ার মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খাতুনগঞ্জে এলাচের বাজার। তবে, মসলা ব্যবসায়ীদের দাবি কিছু ট্রেডিং ব্যবসায়ী যারা তেল, চিনি ও গমে বিনিয়োগ করতেন, তারাই হঠাৎ করে এখন এলাচ কিনে মজুদ করা শুরু করেছেন। যেকারণে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচের বাজার বেড়েছে অন্তত কেজিতে ৫০০ টাকা। প্রতিটি দোকান ও গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্বেও কৃত্রিম ভাবে এলাচের দাম বৃদ্ধির পেছনে গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকেই দায়ী করছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, তেল চিনিতে লোকসানের আশংকায় নতুন করে মসলার বাজারে বিনিয়োগ ও গুদামে মজুদ করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক দর উঠানামা করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সুত্রে জানা যায়, যে পরিমাণ এলাচ সারাদিন কেনাবেচা হচ্ছে তারমধ্যে এক কেজিও বাইরে ডেলিভারি হচ্ছে না, শুধুমাত্র গুদাম পরিবর্তন হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের একজন পাইকারী মসলা ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত কয়দিন ধরে এলাচের এই অস্বাভাবিক হাত বদলের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। তিনি আরও বলেন, গুটিকয়েকজন ডিও বা স্লিপ ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এক প্রকার জুঁয়া খেলেন। নিজেদের মধ্যে ট্রেডিং করে তারা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম উঠানামা করিয়ে বিপুল অংকের টাকা মুনাফা করে থাকেন। এরাই মূলত সেই খেলায় মেতেছে মসলার বাজারে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গরম মসলার বুকিং বাড়তি থাকলেও খাতুনগঞ্জের বাজারে যেসব মসলা মজুদ আছে সেগুলো বহু আগেই আমদানি হয়েছে। সুতরাং বুকিং দর বাড়ার প্রভাব এখানে পড়ার কথা না।
সরেজমিনে খাতুনগঞ্জের পাইকারি মসলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৭ আগষ্ট রবিবার প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২২৭০ টাকায় যা গত একসপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ১৮০০ টাকায় (এটাকে ২০২৩-২০২৭ সাল বলা হয়ে থাকে)। অন্য আরেকটি এলাচ যেটা পুরোনো মাল হিসেবে পরিচিত সেটা বেচাকেনা হয়েছে গতকাল কেজিপ্রতি ১৮৭০ টাকায় (এটাকে ২০২২- ২০২৬ সাল হিসেবে পরিচিত) এছাড়া জিরা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০ টাকা, গোল মরিচ ৬১০ টাকা, দারচিনি ৩০৫ টাকা এবং লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৭০ টাকায়। এলাচ ছাড়াও গরম মসলার অন্যান্য আইটেম জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ ও গোল মরিচের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা যায়।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক হাজী জসিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, দেশে প্রায় সব ধরনের মসলা আমদানি করতে হয়। এলাচ আসে গুয়েতমালা থেকে। বাকি সব পণ্য ভারত থেকেও আসে। তবে এটি ঠিক বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে গরম মসলার বুকিং দর বেড়েছে। কিন্তু খাতুনগঞ্জের বাজারে যেসব মসলা মজুদ আছে এসব আগেই আমদানি করা হয়েছে।
গরম মসলার মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেবল এলাচের দামটাই বেড়েছে অস্বাভাবিক ট্রেডিংয়ের কারণে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, গরম মসলা স্লো আইটেম হওয়ার পরও হঠাৎ করে কারণ ছাড়া দামবৃদ্ধি সিন্ডিকেট কারসাজি ছাড়া কিছুই না। প্রতিদিনের রান্নায় খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না গরম মসলা। তারপরেও থেমে নেই ব্যবসায়ীদের কারসাজি। জেলা প্রশাসন গুদাম গুলোতে অভিযান পরিচালনা করলেই মজুদদারির বিষয়টি প্রতীয়মান হবে এবং বেচাকেনার সাথে পণ্য ডেলিভারির অসঙ্গতি থাকলে তাও সুস্পষ্ট হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কিংবা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অভিযানের বিকল্প নেই- এতে সাধারণ ক্রেতাদের ন্যায্যতা রক্ষা পাবে।
Discussion about this post