শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ে গঠিত হয়েছিল শ্রমিক আদালত। কিন্তু আদালত গঠন করা হলেও নিয়মিত কার্যক্রমের অভাবে জমেছে মামলার স্তূপ। কাগজে কলমে শ্রম অধিকার নিয়ে সচেতন মহল সোচ্চার হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। শ্রমিকদের অধিকার বুঝিয়ে দিতে গড়িমসিসহ শ্রমিকদের সাথে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে বেশকটি নামীদামী কর্পোরেট কোম্পানিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর রোষানলে পরে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্য করেন স্বেচ্ছায় চাকুরী ছাড়তে, নাহয় তাদের বিরুদ্ধে জুড়ে দেওয়া হয় নানান গায়েবী অভিযোগ। শ্রম আদালতে মামলা করেও ধীরগতির কারণে মিলছে না কোনো প্রতিকার বলে জানান কর্পোরেট কোম্পানিতে কর্মরত একজন ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি স্বনামধন্য একটি রঙের কোম্পানিতে মার্কেট ম্যানেজমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সেই কোম্পানির পুরোনো কিছু কর্মকর্তার কর্পোরেট রাজনীতির মারপ্যাচে পতিত হওয়ার আশংকায় তিনি গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টকে অবগত করে মেইল দিয়ে জানানোর পরও তাঁকেই উল্টো ফাঁসানো হয়। জড়ানো হয় মিথ্যা মামলায়, চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় তাঁকে। তাঁর দাবি, কোম্পানির গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিহত করতে গিয়ে মিথ্যা অপবাদে চাকুরীচ্যুত হচ্ছে এমন অনেকেই। তিনি শ্রম আদালত চট্টগ্রামে উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে গত বছর একটি মামলা করেন। তবে, শ্রম আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা ও ধীরগতির কারণে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি করেছে সেটি দিয়ে তাকে ঘায়েল করার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শ্রম আদালত রয়েছে দুটি। সেখানে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৮৮টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতে ১ হাজার ৬৯৯টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৬৮৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দুটি আদালতে গত এক বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৮১টি মামলা। এসব আদালতে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আটকে আছে প্রায় হাজার খানেকের বেশি মামলা। নিয়ম অনুযায়ী শ্রম আদালতে মামলা করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
এ ব্যপারে বিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেন, বিচারকশূন্যতা, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি, সমন জারিতে দেরি, জবাব দাখিলে আইনজীবীদের বারবার সময় নেওয়া সহ বিভিন্ন কারণে শ্রম আদালতে বছরের পর বছর ধরে মামলা ঝুলে আছে।
চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের আইনজীবী এস.এম.শাহাবুদ্দিন বলেন, শ্রমিকের অধিকার আদায়ে মামলা করা হলেও সময়মতো এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ধৈর্যহারা হয়ে অনেকে আর খোঁজ নিতে আসেন না। তাছাড়া আদালতে বিচারক স্বল্পতায় মামলার জট দীর্ঘতর হচ্ছে। তাছাড়া দুইপক্ষই বারবার সময় নেওয়ার কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হয়। তবে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।