শীতের হাওয়া বইছে প্রকৃতিজুড়ে । আর এই শীতের হাওয়ার মধ্যে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তৃত এলাকা। এমন চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে।মৌমাছিরা ভিড় করছে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গুন গুন করে মধু আহরণে ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় ক্ষেতের পর ক্ষেতে সরিষা ফুলের এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্যের দেখা মিলবে। সেইসঙ্গে কৃষকরাও এবার ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন। যদি প্রকৃতি বিরূপ আচরণ না করে তাহলে এবার তাদের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ হয়ে থাকে আড়াইহাজার উপজেলায়। গত বছর থেকে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনে বেশ গুরুত্ব দেয় সরকার। সেকারণে এবার সরিষার চাষ বাড়িয়েছেন কৃষকরা।
বিশনন্দী ইউনিয়নের রামচন্দ্রদীর এলাকার কৃষক আজগর আলী বলেন, গতবছর অল্প কিছু জমিতে সরিষার চাষ করেছিলাম। এবার প্রায় দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সেইসঙ্গে এবার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো খারাপ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যদি এরকম থাকে তাহলে এবার বাম্পার ফলন হবে।
কবির হোসেন নামে এক কৃষক গণমাধ্যমকে বলেন, আমি দেড়শ কাঠা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ভালো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে এবার অনেক লাভবান হতে পারবো। বলা যায়, এ বছর বাম্পার ফলন হবে সরিষার। এবছর সরকার থেকে বীজ দিয়েছে, যে কারণে অনেকেই সরিষার চাষ করেছেন।
আলফাজ উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, কম সময়ের মধ্যেই সরিষা ঘরে তোলা যায়। সেইসঙ্গে খরচও তেমন হয় না। এবার মেঘ বৃষ্টি থেকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে ফলন অনেক বেশি হবে, যা অন্য কোনো বছর হয়নি।
আড়াইহাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছর দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমির টার্গেট ছিল। এবছর সেটা বাড়িয়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করার টার্গেট করা হয়েছিল। মাঠের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে টার্গেটের চেয়েও বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি যেমন আছে, পরেও এরকম থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এবার আমরা বিনামূল্যে কৃষকদের বীজ দিয়েছিলাম। সেইসঙ্গে দুই হাজার কৃষককে সারও দিয়েছিলাম। যার কারণে অনেক কৃষক সরিষা চাষে আগ্রহী হন। এবার আড়াইহাজার উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার টন সরিষা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল মাজেদ জাগো নিউজকে বলেন, তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সরিষা থেকে সহজেই তেল বের করা যায়। বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়। কিন্তু কৃষকরা যেটা চাষ করেন সেটা সময় বেশি লেগে যায়। সেটার বিপরীতে বারি-১৪ সরিষা চাষ করে সারাদেশেই কৃষকরা আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, সরিষার দামও আগের থেকে বেড়েছে। যার কারণে কৃষকরা যে জমিগুলো পতিত থাকতো সেটা পতিত না রেখে চাষ করছেন। জেলায় আমরা গত বছরের টার্গেটের তুলনায় ১০ থেকে ১২ পার্সেন্ট বেশি জমি আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। গত বছর টার্গেট ছিল চার হাজার ৪০০ হেক্টর। এবারে আমাদের টার্গেট হচ্ছে চার হাজার ৯১০ হেক্টর, যা এরইমধ্যে আমরা অর্জন করে ফেলেছি।
Discussion about this post