মিজানুর রহমান, বরিশালে আদি কাগজপত্র ও স্টেশনারি মালামালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুনশী প্রকাশনীর পরিচালক। নগরীর অনামী লেন সড়কে সেই ১৯৭৪ সালের পর থেকে ৪৮ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বেশি দিন আগের কথা নয়, মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই সব কাগজ ও স্টেশনারি মালামালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে লাগামহীনভাবে। করোনার আগে যেই দামে মালামাল ক্রয় করেছি এখন অদৃশ্য কারণে সেই একই জিনিস তার দু-তিনগুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা ঢাকা থেকে মালামাল কিনে আনি। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা মূল্যবৃদ্ধির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাতে না পারলেও তারা নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধি করেই চলছেন। ফলে আমাদেরও মালামালের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করতে হয়। এ বিষয় নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডায় জড়াতে হয়।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে যে কাগজ টনপ্রতি ২০-২১ হাজার টাকায় কিনেছি, এখন সেই কাগজ টনপ্রতি ৪১ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। রেজিস্টার খাতা ২০২১ সালে রিমপ্রতি কিনেছি ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ২০২২ সালে এসে সেই খাতার রিম কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৯০ টাকায়। ২০২১ সালে ৬৫ গ্ৰাম কাগজের রিম কিনেছি ১ হাজার ২৮৫ টাকায় এখন সেই কাগজ ২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ৫৫ গ্ৰাম কাগজ ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৮৫ টাকা, ২০২২ সালে এসে তা বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি কালি (কোরিয়ান) ২ পাউন্ড এক বছর আগে ছিল ৩৮৫ টাকা, এখন তা হয়েছে ৭০০ টাকা।
এভাবে কাগজ থেকে শুরু করে স্টেশনারি সব মালামালের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে লাগামহীনভাবে। ফলে বাধ্য হয়ে ‘লাগামহীন আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা অসহায়’ লেখা বোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে না হয়।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট করে এমন মূল্যবৃদ্ধি করেছে। প্রকাশনী ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ফলে মূল্যবৃদ্ধি হলেও অতিরিক্ত মূল্যে মালামাল কিনে ব্যবসা করতে হচ্ছে। অনেকেই মূল্যবৃদ্ধির কারণে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন, মালামাল আনা-নেওয়ার পরিবহন খরচ দিয়ে পোষাতে না পেরে ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এ আদি ব্যবসাও একদিন ছেড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের এখনই নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এভাবে চলতে থাকলে পর্যায়ক্রমে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সরকারের এখনই এ বিষয়ে সঠিক তদারকি প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।