নাটোরে আখের সাথে বাড়ছে সাথী ফসলের চাষ। চাষিরা আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে একাধিক ফসল রোপন করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে বাড়তি আয় করছেন। সাথী ফসল চাষে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় সাথী ফসল চাষের আগ্রহ বাড়ছে। আখ ও সাথী ফসলের ব্যাপক ফলন ও বাজারদর ভালো থাকায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে মতে, নাটোরের মাটি বেলে ও বেলে দোআঁশ। যা আখ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই দিন দিন এই জেলায় আখের চাষ বাড়ছে। চাষিরা আখ চাষ করে পর্যাপ্ত ফলন পেয়েছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষে বেশি আয় করা যায় বলে চাষিরা আখ চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমান চাষিরা আখ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর, মুগ ও মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন এবং তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আলু ইত্যাদি চাষ করছেন। এতে ফলন ও বাজারদর দুটোই ভালো পেয়ে খুশি চাষিরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, নাটোরের আখের বেশ খ্যাতি ছিল। এই জেলায় দুটি চিনির কলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে আমরা আখ চাষের পাশাপাশি অন্যান্য সবজিরও চাষ করছি। এতে তুলনামূলক চাষের খরচ কম লাগছে। একই সাথে একাধিক ফসল চাষ করে আমরা অধিক ফলন ও বাজারদর ভলো পাওয়ায় আমরা খুশি।
আখ চাষীরা বলেন, আমরা আগে আখের ব্যাপক চাষ করতাম। বর্তমানে আখের পাশাপাশি আমরা সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয়, তেল জাতীয় ফসলগুলো আলাদা জমি ছাড়াই বিনা সেচে বৃষ্টি নির্ভর অবস্থায় চাষ করা যায়। ফলে এককভাবে আখ চাষের চেয়ে অনেক লাভজনক। প্রাকৃতিক দূর্যোগে আখের ক্ষতি হলেও সাথী ফসল দিয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়। আর সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয় ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
বড়াইগ্রাম উপজেলার মহিষভাঙ্গা গ্রামের কৃষক কাশেম সরকার বলেন, আমি ১ বিঘা জমিতে আখের চাষ করেছি। সাথে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষ করে ৫০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। এই পেঁয়াজের বাজার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পেঁয়াজ উত্তোলনের পর আবার সাথী ফসল হিসেবে মুগডাল চাষ করে ৩ মণ মুগডাল পেয়েছি। আর জমিতে লাগানো ৮০০০ হাজার আখ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছি।
নাটোর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসআরআই এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান বলনে, ২০২১-২২ রোপণ মৌসুমে নাটোর জেলায় এই প্রকল্পের মোট ৭০টি (প্রতিটি প্লট ১বিঘা) প্রদর্শনী প্লট রয়েছে যা প্রায় ১০ হেক্টর এবং ২০২২-২৩ রোপণ মৌসুমে জেলায় ১৭৫টি (প্রায় ২৩ হেক্টর) প্রদর্শনী প্লট স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতিটি প্লটের জন্য কৃষককে প্রকল্প হতে বীজ আখ, সাথী ফসলের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও সেচ, জমি তৈরি, নালা তৈরি ইত্যাদি কাজের জন্য শ্রমিক খরচ দেয়া হয়। এর ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং আখ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ড. আবু তাহের সোহেল বলেন, আমরা সার, কীটনাশক, বীজ, মসলাসহ চাষাবাদের সকল সামগ্রী কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকরা সাথী ফসল চাষে করে বাড়তি আয় করতে পারছেন। আমরা কৃষকদের সব ধরনের পারামর্শ ও আর্থিকভাবে লাভবান করতে সহযোগীতা করছি।
Discussion about this post