হত্যাকান্ডের প্রায় দুই বছর পর রাঙ্গুনিয়া উপজেলার তপু মালাকার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, নিখোঁজের তিনদিন পর একটি পুকুর থেকে গত ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি তপু মালাকারের লাশ উদ্ধার হয়েছিল। লাশ উদ্ধারের বিষয়টি দুর্ঘটনা মনে করে প্রথমে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। কিন্তু তিন মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, তপুকে হত্যা করা হয়েছে।
পরে মামলাটি তদন্তভার ডিবি’র কাছেও যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ও ডিবি হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি।
সর্বশেষ দুই মাস আগে মামলাটির তদন্তভার নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তভার নেয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই এ হত্যার ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় তারা। এই তিনজনের মধ্যে দুইজন সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়াও জনি মালাকার নামে আরও একজন আসামি ঘটনার পর থেকে বিদেশে গিয়ে পলাতক রয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো- বসু কুমার (৩৩), সুবল মালাকার (২৭), বাপ্পা চৌধুরী (৩২)।
এদিকে গ্রেপ্তারদের মধ্যে হত্যার সাথে জড়িত সুবল মালাকারকে নিয়ে আজ রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে হত্যার আলামত সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে পিবিআই।
এ সময় পিবিআই’র পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, প্রায় দুই মাস আগে আদালতের নির্দেশে এ মামলার তদন্তভার পাই আমরা। তদন্তভার পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। পাশাপাশি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করি। তাদের মধ্যে ১ জনকে ফটিকছড়ি, একজনকে রাঙ্গুনিয়া ও অন্যজনকে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে আমরা তাদের রিমান্ডে নিয়ে গেলে তাদের মধ্যে দুইজন ঘটনাটি স্বীকার করে। তাদের মধ্যে একজনকে নিয়ে আজ আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তারা স্বীকার করেছে তপু মলাকারকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে মৃতদেহটি পুকুর পাড়ে গাছের নিচে রেখেছিল।
আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তারা একটা কাঠের বাটাম দিয়ে তপু মালাকারের মাথায় আঘাত করে হত্যা করে গাছের বাটামটি পুকুরে ফেলে দেয়। আর যে বাটামটি দিয়ে মারা হয় সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত আর তা সংগ্রহ করার জন্য আমরা পিবিআই জেলা টিম এখানে এসেছি এবং পুকুর সেচ দিয়ে বিকেলের দিকে আসামির দেয়া তথ্য অনুযায়ী আলামতটিও পেতে সক্ষম হয়েছি (কাঠের বাটাম)।
তপুকে কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এখানে তিনজন হত্যাকারী। যারমধ্যে একজন ছিল হত্যার পরিকল্পনাকারী। তার নাম জনি মালাকার। জনি মালাকার মূলত এ এলাকায় মাদক ব্যবসা করতো এবং মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে টাকার লেনদেনের ব্যাপার ঘটে আর সেটাকেই কেন্দ্র করে সে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
এদিকে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করে তপু মালাকারের মা শেলী মালাকার বলেন, যদিও দীর্ঘদিন পর আমর ছেলে হত্যার আসামি ধরা পড়েছে, মনে হচ্ছে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে। আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কামনা করছি। আর যাতে কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।
Discussion about this post