নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন মোহরা সংলগ্ন রেললাইন কেন্দ্রীক মাদকের আস্তানা থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক সম্রাট হানিফকে আটক করেছিল পুলিশ। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ভাইকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল হিজড়া বাহিনী নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় বোন নাজমা আক্তার নাজু (২২)। পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর চালিয়ে মাদককারবারি হানিফ ও সহযোগী শরীফকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মাদক কারবারি এই হিজড়া বাহিনী। এ ঘটনায় কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির আইসি শরীফ রোকনুজ্জামান, কনস্টেবল আনিসুল ও রিয়াদুল আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান। তিনি জানান, আহত পুলিশ সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়া আটককৃত আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিতে গুরুতর আহত হয় নাজমা আক্তার নাজু। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পর গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দেয় পুলিশ। সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে চান্দগাঁও থানা ও সিএমপির দাঙ্গা পুলিশের বিশাল বহর সেখানে অভিযানে নামে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে তিন হিজড়াসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন হিজড়া ও তিনজন ছেলে রয়েছে।
ছিনিয়ে নেওয়া মাদক কারবারি ইয়াবার গডফাদার হানিফ বোয়ালখালীর পাপ্পি ও ববির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে এ সংঘর্ষ কালুরঘাট ফাঁড়ি পুলিশ ৫ হাজার ইয়াবাসহ হানিফ ও দেলোয়ারকে আটক করে। দুই মাদক কারবারিকে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় হানিফের ভাই হিজড়া ছদ্মবেশী ইয়াসিন আরাফাতসহ তার সহযোগীরা পুলিশের পথ আটকে দেয়। এসময় মাদক কারবারির সরদার হানিফকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় তারা। পরে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
জিকু ও জনির নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও কথিত হিজড়া ইয়াসিন আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ইমরানের মাদক কারবারির সহযোগী সন্ত্রাসী ও কালুরঘাট এলাকার মাদক কারবারিরা হামলায় অংশ নেয়। আত্মরক্ষা ও আটক আসামিকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এতে হানিফের বোন নাজমা আক্তার গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যেই পুলিশের কাছ থেকে হানিফকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে তারা পুলিশ ফাঁড়িও ভাংচুর করে।
এ ঘটনায় কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির আইসি শরীফ রোকনুজ্জামান, কনস্টেবল আনিসুল ও রিয়াদুল আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমান। তিনি জানান, আহত পুলিশ সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
পুলিশ জানায়, হানিফের বাড়ি পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জ। তার নেতৃত্বে মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদক, জুয়া, দেহ ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। হানিফের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশের বিভিন্ন অভিযানেও সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে মৌলভী বাজার ৯ নম্বর পোল এলাকায় র্যাবের অভিযানে মাদক কারবারির অভিযোগে হানিফকে আটক হয়। খবর পেয়ে পথিমধ্যে হিজড়ার একটি দল তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, হানিফের বাবা লোকমান, ভাই ইয়াছিন ও মারা যাওয়া বোন নাজমা আক্তারও মাদক কারবারে জড়িত। এসব নিয়ন্ত্রণে ভাই ইয়াছিন আরাফাতকে হিজড়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এলাকার লোকজন জানান, হানিফ মূলত বোয়ালখালীর পাপ্পী ও ববির সঙ্গে বিশেষ সখ্যতা রেখেই সব ধরণের অপকর্ম চালায়। হানিফের সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে হচ্ছে বিশু দাশ, ওয়াসিম, মফিজ, সরোয়ার, জিকু, চৌধুরী মামুন। এরমধ্যে বিশু দাশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে।