রংপুর নগরীর বকসা এলাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছেন এক প্রকৌশলী। তার জানাজায় অংশ নেয়নি সন্তানরা।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মরহুমের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন।
এর আগে, রোববার (৩০ অক্টোবর) ওই বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান তিনি। পরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তার কোনো সন্তান ও স্বজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
মৃত ব্যক্তি হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের মৃত এস এ আবুল কাশেমের ছেলে এস এম মনসুর আলী (৭৫)। তিনি টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।
জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস আগে গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামে মনসুর আলীর রংপুর নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের হারাগাছ থানাধীন বকসা বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়। রোববার বিকেলে অসুস্থ অবস্থায় সেখানে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর খবর জেনেও বৃদ্ধাশ্রমের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ছেলে-মেয়ে ও কোনো স্বজন।
স্থানীয়রা জানান, মনসুর আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মহিন সরদার ঢাকায় চাকরি করেন আর ছোট ছেলে রাজু সরদার কাতার প্রবাসী। সম্পত্তির লোভে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এমনকি জীবিত থাকা অবস্থায় মনসুরকে তার ছেলেরা মৃত হিসেবে গ্রামের প্রচার করেন।
নাম প্রকাশ না করে মনসুরের এক আত্মীয় জানান, ঢাকায় প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তার ছেলে ও বোন সেলিনা বেগম ১০ বছর আগে তাকে মৃত দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে মনসুর ওই বাসায় আর ফিরতে পারেনি।
অভিযোগ বিষয়ে মনসুর আলীর ছেলে মহিন সরদারের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ না করায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে রংপুরের বকসা বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য সচিব নাহিদ নুসরাত বলেন, বৃদ্ধ মনসুর আলী ২০২২ সালের জুন মাসে অসুস্থ শরীরে আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। এরপর থেকে আমাদের বৃদ্ধাশ্রমেই ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, টিঅ্যান্ডটি বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামের কাছে তার বহুতল ভবন আছে।
৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রনি সিকদার বলেন, প্রায় সাত মাস আগেই মৃত মনসুর আলীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তার সন্তানরা। মিরপুরের বহুতল ভবন নিজেদের দখলে নিতে বাবাকে মৃত দেখিয়ে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন ও সেখানেই মারা যান। মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসার পরে, আমরা তার সন্তানদের মোবাইল নম্বরে অনেকবার কল করেছি। কেউ আসেননি।
এ বিষয়ে চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, মৃত মনসুর আলীর সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় তার নিজের জমি-বাড়ি রয়েছে। কিন্তু সন্তানরা সম্পত্তির লোভে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তিনি রংপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে ছিলেন। সেখানেই মারা যান তিনি।
তিনি আরও জানান, এই বিষয়টি আমরা জানতাম না। তার মরদেহ যখন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়, তখন কিছুটা অবাক হই। কারণ, এই মানুষটির সঙ্গে গ্রামের বাড়ির লোকদেরও কোনো যোগাযোগ ছিল না। জানতে পারি তার দুই ছেলে-মেয়ের কেউ জানাজায়ও আসেনি।
Discussion about this post