নিজেকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে পরিচয় দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেছেন, “এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ তার নাই।‘’ তিনি বলেন, “সবচেয়ে খারাপ সময়ে আমি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ করা ছেলে। আপনারা নিশ্চিত ধরে রাখতে পারেন আমি আওয়ামী লীগের দালাল, শেখ হাসিনা আমার নেতা, আর আদর্শ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটা স্পষ্ট, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই আমার। আমাকে যারা এইটা মনে করেন তাদের গালাগালি করার কোনো সুযোগ নাই। আমি আওয়ামী লীগের দালালই এর চেয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই।‘’
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, “টিপকাণ্ডে চাকরি হারানো পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে বলেছিলাম আপনি আপনার বউ বাচ্চাকে নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। চাকরি গেছে আপনার, আর বউ বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন, তাদেরকে কষ্ট দিচ্ছেন। আপনি বউ বাচ্চা নিয়ে আমার কাছে আর আসবেন না।‘’
গতকাল বুধবার (৫ অক্টোবর) ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লাইভে এসব কথা বলেন তিনি।
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যার ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন একটি ভিডিও ছাড়েন ইউটিউবে। সেখানে ওসি মোয়াজ্জেম ও টিপকাণ্ডে চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেকের বিষয়ে জড়ানো হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে। এই ভিডিও দেখে সুমন তার অবস্থান পরিস্কার করতে ফেসবুক লাইভে আসেন।
ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “টিপকাণ্ডে কনস্টেবল সাহেব আমার কাছে তিনবার আসছেন। প্রথম বার যখন আসছেন আমি উনাকে বলেছি বিনা পয়সায় সাহায্য করব। যদি কোনো কারণে আপনার পানিশমেন্ট (সাজা) বেশি হয়ে থাকে আইজিপি মহোদয় বরাবর একটি আবেদন করেন। উনি আমার এ অ্যাডভাইজের কারণে আবেদন করেছেন। উনি আবার আসছেন আমি বলছি আপনার উপর মানুষের সিম্পেথি আছে, আপনি চেষ্টা করে দেখেন আপনার চাকরিটা ফেরত পাইতে পারেন। আমি আপনাকে একটা রুল নিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।‘’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, “তৃতীয় বার আমার কাছে বউ-বাচ্চাকে নিয়ে আসেন নাজমুল, আমি তাকে বলি চাকরি গেছে আপনার, আপনি কেন আপনার বউ-বাচ্চাকে নিয়ে আসছেন। এটা তো শরিয়ত বিরোধী। আপনি একজন হুজুর মানুষ এভাবে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে পারেন না। আমি বলছি আপনি যদি আরেকদিন বউ বাচ্চা নিয়ে আসেন, তাহলে আপনি আর আমার কাছে আসবেন না। আপনি কখনই আমার কাছে আসবেন না। আমি আপনাকে আসতে দেব না।‘’
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, “আর এই ভিডিওটি পুরোটা না দেখিয়ে, অর্ধেক অর্ধেক করে ভিডিও করে যারা মানুষকে দেখায়। তাদের প্রতি আমি বলব আপনাদের প্রতি এই ধরনের জিনিসই অপেক্ষা করছে। আরেকটা জিনিস হলো উনি বার বার আমার পিএসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, আমি নাকি উনার সঙ্গে দেখা করি নাই। শেষ বার উনি আমাকে চিটার বলার চেষ্টা করেছেন। এইভাবেই যদি হয় তাহলে ভিডিওটা এলো কিভাবে?’’ প্রশ্ন রাখেন সুমন। তিনি বলেন, “উনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন কিভাবে? এই কনস্টেবল সাহেবের মনের মধ্যে যদি দুই নাম্বারি না থাকে তাহলে আমার অনুমতি ছাড়া ভিডিও আরেকজনের কাছে দিয়েছেন। আমার অনুমতি ছাড়া আমার পিএসের সঙ্গে ফোনের কথা উনি রেকর্ড করেছেন। রেকর্ড করে অন্যসব লোকের কাছে পাঠিয়েছেন। এটা একটা বিরাট বড় অপরাধ। মনের মধ্যে উনার দুই নম্বরি না থাকলে এই ফোন রেকর্ড করে মানুষের কাছে তা দিতেন না।‘’
নাজমুলকে ৮ বছরের সাজা হওয়ার কথা উল্লেখ করে সুমন বলেন, “জানেন উনি কী অপরাধ করেছেন, ঠিক ওসি মোয়াজ্জেম যেরকমর অপরাধ করেছেন। আমি ইচ্ছা করলে উনার (নাজমুলের) বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারি। ওসি মোয়াজ্জেমের মতো নাজমুলের ৮ বছরের সাজাও হতে পারে। কিন্তু আমি এটা করব না। কারণ এমন ছোট লোকদের বিরুদ্ধে কাজ করি না। আমি সমাজের বড় বড় লোকের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের বড় বড় ক্ষতি করে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ করে অনেক কিছু হারাইছি জীবনে, তারপরেও আপনারা এই যারা এসব ভিডিও দেখে আমারে বকাঝকা করেন। তাদেরকে আমি বলি বাংলাদেশে ভালো মানুষকে আপনারা জন্ম নিতে দেন না, বাঁচতেও দেবেন না।‘’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, “বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে কোনো ভালো মানুষকে তো আপনারা বাঁচিয়ে রাখেন নাই। আমারে বলেন- আমি নাকি সরকারের দালালি করি। আমি স্পষ্ট করে বলি আমি ২০০১ সাল থেকে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ করা লোক। সবচেয়ে খারাপ সময়ে আমি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ করা ছেলে। আপনারা নিশ্চিত ধরে রাখতে পারেন আমি আওয়ামী লীগের দালাল, শেখ হাসিনা আমার নেতা, আর আদর্শ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটা স্পষ্ট, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই আমার। আমাকে যারা এইটা মনে করেন তাদের গালাগালি করার কোনো সুযোগ নাই। আমি আওয়ামী লীগের দালালই এর চেয়ে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই।‘’
এদিকে সম্প্রতি এক ভিডিওতে বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ব্যারিস্টার সুমনের কাছে বার বার গিয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি টিপকাণ্ডে চাকরিচ্যুত হওয়া পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হোসেন।‘’