ছিটমহল বিনিময়ের সাত বছরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ার উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, ভূমির রেকর্ড, বিদ্যুৎ, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বিলুপ্ত এ ছিটমহলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। পাল্টে গেছে এলাকার সার্বিক চিত্র।
গত সাত বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হয়েছে দাসিয়ারছড়ায়। এর মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এলজিইডির মাধ্যমে ২৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া হয়েছে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, শহীদ মিনার, আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ধর্মপ্রাণদের জন্য নির্মিত হয়েছে পাঁচটি মসজিদ, একটি মন্দির। ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নীলকোমল নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি হতদরিদ্র পরিবারকে উপহার দেওয়া হয়েছে বসতবাড়ি। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ১ কোটি টাকা ব্যয়ে বালাটারী, কামালপুর ও খড়িয়াটারী পাড়ায় তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ ২-এর আওতায় ৪৪টি পরিবারকে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এ অফিসের মাধ্যমে ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
দাসিয়ারছড়ায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগে এখন প্রতিটি ঘর আলোকিত। দেওয়া হয়েছে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এখানের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সাব-সেন্টার থেকে স্বল্পমূল্যে দেওয়া হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির সেবা। সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ৬৩০ জনকে বয়স্কভাতা, ২৮২ জনকে বিধবা ভাতা ও ৬৪ জনকে দেওয়া হয় প্রতিবন্ধী ভাতা।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ড হয়েছে ১ হাজার ৮৫৯ জনের, মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয়েছে ২০০ জনকে, সেলাই মেশিন পেয়েছেন ৫৫ জন। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় ৩৬০ জনকে মোট ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। ৫০০ হতদরিদ্র পরিবারকে আনা হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায়।
গড়ে উঠেছে মোট ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- দাসিয়ারছড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, দাসিয়ারছড়া সমন্বয়পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কামালপুর মইনুল হক নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শেখ ফজিলাতুন নেছা দাখিল মাদ্রাসা।
ছিটমহল আন্দোলনের নেতা আলতাফ হোসেন বলেন, তাঁদের প্রাণের দাবি দাসিয়ারছড়া ইউনিয়ন ঘোষণা না হলেও গত সাত বছরে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। তাই প্রতি বছরের মতো ছিটমহল বিনিময় দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের অধিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। দাসিয়াছড়ায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানেও অনেক উন্নয়নকাজ চলমান।