ঈদুল ফিতরের আমেজ শেষে বেশির ভাগ মানুষ কর্মস্থলে ফিরলেও বাজারে এখনও ঈদের আমেজ কমেনি। বরং ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে বাড়িয়ে বিক্রি করা মুরগি ও গরুর মাংসের পাশাপাশি রুই, পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়াসহ অধিকাংশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সেই বাড়তি দামে।
দাম বাড়লেও ক্রেতা কম থাকায় বেচা-কেনা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গরু কেনায় খরচ বেশি, তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।গরুর মাংসের কেজি এক দাম ৭০০ টাকা। কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। গরু তো কম দামে কিনতে পারিনি, কেনার পাশাপাশি গরু আনার সময় বিভিন্ন বকশিস দিতে হয়েছে। আপনিই বলেন, গরুর মাংসের দাম না বাড়িয়ে বিক্রি না করে কী লোকসানে বিক্রি করব?
ক্রেতারা বলছেন, মেহমানদের ভালো কিছু খেতে দেওয়ার জন্য বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে গরুর মাংস।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপস্থিতি একেবারেই কম, অনেকে দোকানও খোলেনি। তবে যে কয়টি দোকান খোলা রয়েছে সেগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে, ছাগল-খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজিতে।ঈদের আগে একই দোকানে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া গরুর মাংস ঈদের দিন বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৩০ টাকা কেজিতে।
এক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, হাড়সহ গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। হাড় ছাড়া শুধু মাংস ৭৮০ টাকা।বটের কেজি ২৫০ টাকা। আর কলিজা ৮০০ টাকা। গরুর পায়া ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা জোড়া। গরুর দাম বেশি হলেও আমাদের লাভ কিন্তু খুবই সীমিত।
এখন বিক্রি কম, ব্যবসাও কম। গত দুদিনে যা বিক্রি হয়েছে তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি।
বাজারে মাংস কিনতে এসেছেন একজন মধ্যবয়সী পুরুষ। তিনি বলেন, ঈদের দিন বেশকিছু মাংস কিনেছি, আজকে আমার মেয়ের বাড়ি থেকে আত্মীয় স্বজন আসবে তাদের ভালো খাবার দিতে হবে। সে জন্য গরুর মাংস কিনতে এসেছি। কিন্তু আজকে তো মনে হচ্ছে ঈদের দিনের চেয়েও দাম বেশি।
মুরগির মধ্যে ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। আকারে ছোট পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় পিস। দেশি ছোট মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা পিস। আর বড় সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা পিস। আর দেশি বড় মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পিস। অথচ ঈদের আগে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৬০ টাকা কেজিতে। যা ঈদের সময় বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ ঈদের সময়ের বাড়তি দরে এখনও বিক্রি হচ্ছে গরু ও মুরগির মাংসের দাম।
মাংসের পাশাপাশি মাছের বাজারেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। ঈদের আগের ২৪০-২৬০ টাকা বিক্রি হওয়া রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছও। আর ২২০ টাকা কেজি বিক্রিত হওয়া কারফুর মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে। ৪৫০-৫০০ টাকা কেজির টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। ১২০ টাকা কেজির পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। তেলাপিয়া মাস বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। চাষের শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। আর দেশি শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা কেজিতে। চাষের মাগুর মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। এছাড়াও এক কেজি ওজনের (দুই-তিনটি) ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ হাজার টাকায়।
এদিকে ঈদের পর পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকার অজুহাতে বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁপের দাম। শুক্রবার (৬ মে) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখে গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের সময় মাল কম আসছে, তাই সবজির দাম একটু বেশি। এছাড়াও নতুন পেঁপে এখনো না উঠায় দাম বেশি যাচ্ছে। প্রতিবারই বছরের এই সময়ে এসে পেঁপের দাম বাড়ে।
এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাকরল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, করোলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, ধন্দুল ৫০ টাকা , কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা,লাউ প্রতি পিস ৬০/৭০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে এসে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের পর আজই প্রথম বাজারে এলাম। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সব জিনিসের দাম বেশি। প্রতিটি সবজির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বেশি অবাক লাগছে পেঁপের কেজি দাম ৭০-৮০ টাকা শুনে।এখন আধা কেজি করে সবজি কিনতে হচ্ছে।
সবজির সার্বিক দাম বিষয়ে বিক্রেতারা বলেন, সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। ঈদের সময় মালামাল নিয়ে গাড়ি কম আসছে। আসলেও ভাড়া বেশি। সব মিলিয়ে সবজির দাম একটু বাড়তি যাচ্ছে।