মূল পর্বের খেলা আজকে হলেও গেল কয়েকদিন আগ থেকেই বসেছে মেলা। আলোচনা-সমালোচনা নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম নগরীর শত বছরের ঐতিহ্য লালদিঘীর পাড়ের ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা।
আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলীখেলার উদ্বোধন করেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, শামসুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম, কোতোয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
এই বলী খেলাকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও লালদিঘীর মাঠের আশপাশের এলাকাজুড়ে রোববার থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখী মেলা। আয়োজক কমিটি জানায়, খাট থেকে শুরু করে সুঁই সুতায় বোনা নিপুণ নকশাদার রুমালও পাওয়া যাবে মেলায়। ফুলঝাড়ু, হাত পাখা, শীতল পাটি, মাটির ব্যাংক, বাঁশি, দা, খুন্তি, মাটির টব ও শো পিস, ছোটদের খেলনা, প্লাস্টিকের মাদুর, মেয়েদের হাতের চুরিসহ সব ধরনের পণ্য মিলে এই মেলায়।
গত শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। লালদীঘিসহ আশেপাশের এলাকায় নিয়ে আসা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন তারা। বেশ বিকিকিনি হচ্ছে।ক্রেতা-বিক্রেতারাও বেশ খুশি।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর বলী খেলা হয়নি। এবার লালদীঘি মাঠ পাওয়া না যাওয়ায় অনিশ্চয়তা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উদ্যোগ নেয়ায় এবার বলী খেলা হচ্ছে। মেয়রের উদ্যোগে লালদীঘি মাঠের পাশে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে ২০ ফুট বাই ২০ ফুটের অস্থায়ী মঞ্চে হয়েছে বলী খেলা। দীর্ঘ বিরতির পর খেলা ও মেলা হওয়ায় বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে নগরবাসীর চোখে-মুখে। একইসঙ্গে মেলা শুরু হওয়ায় সাজ সাজ রব পড়েছে লালদীঘিসহ আশেপাশের এলাকায়।
রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, যশোর, কুমিল্লা থেকে পণ্য সামগ্রী নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলায় যারা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছেন তারা কিন্তু বংশ পরম্পরায় জব্বারের বলী খেলায় আসছেন।
গতকাল মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের পসরা দেখা গেছে। আছে রঙে বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মাটির পণ্যও। ঢাকা, যশোর ও কুমিল্লা থেকে কুটির ও মাটির শিল্পের পণ্য নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। হাটহাজারী, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া থেকে ফুলের ও ফলদ চারা বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ীরা।
আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান,বলী খেলায় ১৫০ জন বলীর নাম তালিকাভুক্ত ছিল। এর মধ্যে বাছাই করে ১০০ জনকে খেলতে দেওয়া হল। ৫০ রাউন্ড খেলা হয়েছে। এবার ক্রেস্টের পাশাপাশি বলী খেলার প্রথম পুরস্কার থাকছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২য় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা, ৩য় পুরস্কার ৬ হাজার টাকা এবং ৪র্থ পুরস্কার দেয়া হবে ৫ হাজার টাকা।
শুরুর আগেই বলীখেলার মঞ্চের চারপাশে নানা বয়সী মানুষ ভিড় করতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে
উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই বলী খেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তি’ বলী খেলা নামে পরিচিত।