করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে দেশের পণ্য রপ্তানি খুব ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয়ের পর সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসেও ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল। গত সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক ও বিশেষত নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া চামড়া ও চামড়াপণ্য, কৃষি, প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সকল পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার যা গত বছরের একই সময়ের রপ্তানি পরিমাণের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি ছিল ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় প্রসঙ্গে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল রপ্তানি বিষয়ে বলেন, ”তৈরি পোশাক খাতে মার্চে সার্বিকভাবে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ গত বছর এ সময় কোভিডের কারণে রপ্তানি আয় অনেক কম ছিল। এ বছর মার্চ মাসে ৩.৯ বিলিয়নের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অর্থাৎ রপ্তানির ইতিবাচক ধারা এখনো অব্যাহত আছে।” তিনি আরও বলেন, ”পোশাক খাতের রপ্তানির ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেলেও কিন্তু অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিভিন্ন কাঁচামাল যেমন টেক্সটাইল, পণ্য জাহাজীকরণ খরচ, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাজার অনেক চড়া, কিন্তু পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির অনুপাতে পোশাকের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাড়ছে না। এগুলো যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে রপ্তানি আয় আরও বেশি হতো।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৯ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
তবে আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে। মার্চ শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি আছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছর পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার, যার মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।