ভোজ্যতেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের কথা আবারও জানাল সরকার। আজ সোমবার এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো সুযোগ নিতে না পারেন, সে জন্য আগামী দু–এক দিনের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করবে সরকার।
রাজধানীর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয় এবং বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের তরল দুধের (মিল্ক ভিটা) দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, প্রাথমিক সমিতি থেকে শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধ পরিবহন ক্ষেত্রে ২৩ শতাংশ পরিবহন ব্যয় বেড়েছে।
দুধের দাম বাড়ানো হলে মানুষের ব্যয়ের পরিমাণও বাড়বে।
এখন বাজারে মিল্ক ভিটার প্রতি লিটার পাস্তুরিত তরল দুধ বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়। বৈঠক সূত্র জানায়, এতে মিল্ক ভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২০ সাল থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংস্থাটি ১৩ লাখ টাকা লাভ করেছে। মিল্ক ভিটা পাস্তুরিত তরল দুধসহ দুধ ও দুগ্ধজাত ২১ ধরনের পণ্য বাজারজাত করে।
দেশে নিত্যপণ্যের দাম একসঙ্গে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, নিত্যপণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক কমানো হচ্ছে।
এদিকে গত অক্টোবরে অপরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমানো হয়। এখনো চিনির ওপর টনপ্রতি ৩ হাজার টাকা সুনির্দিষ্ট শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের ভ্যাট দাঁড়াচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ টাকা। দুই বছর ধরে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে। আমদানিমূল্য যত বাড়ছে, তেল থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ততই বাড়ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভ্যাট-ট্যাক্সের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সোমবারের (আজ) মধ্যে একটা পদক্ষেপ নিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে সবার সঙ্গে আলাপ করেই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোথাও মজুতদারি করতে দেব না, কোনো সুযোগ নিতে দেব না। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে যেখানে এ অবৈধ মজুতের চেষ্টা করবে, সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করব।’ অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর জন্য আগেও দফা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়েছিলেন। তা আমলে নেওয়া হয়নি।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও খোলাবাজারে বিক্রি কর্মসূচির (ওএমএস) আওতায় চাল-আটা বিক্রির কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হবে। সংকট মোকাবিলায় টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে ছয়টি পণ্য দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর কমপক্ষে চারটি পণ্য গ্রামাঞ্চলে পাঠানো হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম প্রতিদিনই দেখছি বাড়ছে। সেটার প্রভাব আমাদের দেশেও এসেছে। রোজার মধ্যে অন্যান্য জিনিসেরও দাম বাড়তে পারে, সেটি মাথায় রেখেই আমরা বসেছিলাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল, গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমে যাচ্ছে। গমের সরবরাহ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসত, সেখানেও আমরা অসুবিধায় পড়তে পারি, দাম বাড়তে পারে। কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে বা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সে জন্য সভা হয়েছে।’
আন্তমন্ত্রণালয় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। এছাড়াও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বপন ভট্টাচার্য্য, মসিউর রহমান, রেবেকা মমিন, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, শাহে আলম, ছানোয়ার হোসেন এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী অংশ নেন।