বিদেশে যাচ্ছে বগুড়ার আলু। জানা গেছে, বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চল থেকে এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন বিষমুক্ত আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মেসার্স সাগর ট্রেডার্স একাই ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি করছে। আলু ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে রপ্তানি করছে হরেক রকমের বিষমুক্ত সবজি। এ ছাড়া জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে আরেকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করছে। শিবগঞ্জ, কালাই, ক্ষেতলাল থেকে রপ্তানি করছে একাধিক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
সাগর ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাগর হোসেন ফকির জানান, বেসরকারি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসওয়া অ্যাগ্রো লিমিটেড ও বায়রন অ্যাগ্রো কম্বাইন লিমিটেডের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় গ্রানুলা, অ্যাসটরিক, দেশি পাকড়িসহ অন্য কয়েকটি জাতের আলু পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে ৫ হাজার ৬০০ মেটিক টন আলু পাঠিয়েছেন। এ বছর ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন আলু রপ্তানির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানিকারক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে তিনি একাই ১২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন আলু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করেছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ হরেক রকম সবজি রপ্তানি করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আলু ও সবজি ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি বাজার ধরতে তিনি হল্যান্ড থেকে সান্তানা, আলতা, ডোনাটা, সানশাইন, কুমুরিকা, এ-সেভেন, অ্যাকালা, ফ্রেশসহ উন্নত জাতের ১৪০ টন বীজ আমদানি করেছেন এবার।
এই উপজেলার আরও বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক বিদেশে আলু রপ্তানি করছেন। এসব আলু বিদেশের কারখানায় চিপসসহ নানা পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এক সময় বিভিন্ন সবজি মৌসুমের শেষ দিকে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকত। সঠিক বিপণন কৌশলের অভাবে এটা ঘটত। কিন্তু এখন বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা সেই অবস্থা থেকে রেহাই পেয়েছেন। পাশাপাশি দেশের ভেতরেই যদি মূল্য সংযোজনের আরও ক্ষেত্র তৈরি হয়, তাহলে চাষিরা উপকৃত হবেন। তবে সে জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চল থেকে এবার কমপক্ষে ২৫ হাজার টন আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই আলুর রপ্তানিমূল্য ৬২ দশমিক ৫ কোটি টাকা। বগুড়া অঞ্চলের আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় তার চাহিদা বাড়ছে। এতে আলু রপ্তানির সম্ভাবনাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় ৫৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু চাষ হয়েছে। জেলার ৩৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা ৩ লাখ ১৭ হাজার টন। বাকি ৯ লাখ মেট্রিক টন আলু নিয়ে প্রতিবছর বিপাকে পড়েন কৃষক। শিবগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে প্রায় এক দশক ধরে বিদেশে আলু ও হরেক সবজি রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকেরা আরও আশাবাদী হয়ে উঠছেন।
বগুড়া কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন বলেন, ”কয়েক বছর ধরেই বগুড়া থেকে আলু ও সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে বছরে কী পরিমাণ কৃষিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে সেই তথ্য কৃষি বিভাগের কাছে নেই।”
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেল, শিবগঞ্জ বন্দরের নাগর সেতু-আমতলী সড়কের পাশে বেশ কয়েকজন শ্রমিক রপ্তানিযোগ্য আলু প্লাস্টিকের নেট ব্যাগে ভরছিলেন। শ্রমিকেরা জানান, স্থানীয় বাজারে এখন পাইকারি পর্যায়ে দেশি পাকড়ি আলু প্রতি মণ ৫৫০ টাকায়, গ্রানুলা ৩৫০ টাকায়, অ্যাসটরিক ৪৭০ টাকায় কিনে রপ্তানির জন্য মোড়কজাত করা হচ্ছে।
Discussion about this post