রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আমদানি করে বাংলাদেশে গমের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয়। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এ দুই উৎস থেকেই গম আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এদিকে বিশ্ববাজারে বাড়ছে গমের দাম।
শুধু গম নয়, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের আরও কিছু পণ্যের সরবরাহ ও দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীদের উপর। কারণ, রডের কাঁচামাল পুরোনো লোহার একটি বড় উৎস ইউক্রেন। সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রডের দাম প্রতি টনে পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে।
রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায়। এরপর পশ্চিমাদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা সুইফটের মাধ্যমে রাশিয়ার ১২টি ও বেলারুশের ২টি ব্যাংকের লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা কার্যকর হবে ১২ মার্চ। আবার ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় জাহাজ পরিবহন সেবাদানকারী শিপিং লাইনগুলো রাশিয়া থেকে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আর যুদ্ধের কারণে অনেক বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ইউক্রেন থেকেও পণ্য আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল গম। এ ছাড়াও দেশটি থেকে মটর ডাল, সরিষা, পুরোনো লোহার টুকরা, সয়াবিন দানা ও রাসায়নিক আমদানি হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার টন গম আমদানি হয়। এর ২৬ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেন থেকে এসেছে ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া গমের ৪১ শতাংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
এদিকে পাইকারি বাজারে গমের দাম বেড়েছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহেদ উল আলম বলেন, বাজারে এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের গম নেই। বিক্রি হচ্ছে কানাডা ও ভারতীয় গম। যুদ্ধ শুরুর পর কানাডার গমের দাম প্রতি মণে ১০০ টাকা বেড়ে গতকাল ১ হাজার ৮২০ টাকায় উঠেছে। তিনি বলেন, ভারতের গমের দাম প্রতি মণে ১৬০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট শিকাগো বোর্ড ট্রেডের (সিবিওটি) হিসাব বলছে, সেখানে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গম বিক্রি হয় প্রতি টন ৩৪০ মার্কিন ডলারে। চার দিন পর গত শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯৫ ডলারে।
ভারতের পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারত গম রপ্তানি বাড়িয়েছে। মার্চ শেষে আগের ১২ মাসে তাদের রপ্তানি ৭০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।
স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরার দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ছিল প্রতি টন ৫৭০ ডলার। গতকাল রোববার বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫০ ডলারে। দেশের বাজারে গত ১০ দিনে রডের দাম প্রতি টনে ৫ হাজার টাকা বেড়ে ৮৩ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ”সামনে রোজা আসছে। এ সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। কঠিন পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের বিষয়ে যেকোনো সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, ”সুবিধাজনক হলো প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি।”
আমদানিকারকেরা জানান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ডসহ তৃতীয় দেশে ঋণপত্র খুলে রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তৃতীয় দেশগুলোর সরবরাহকারীরা জটিলতা এড়াতে ঋণপত্র (এলসি) নিচ্ছে না। যেসব ঋণপত্র নেওয়া হয়েছে এবং পণ্য জাহাজীকরণের অপেক্ষায় ছিল, সেগুলোও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।