দ্রুতগতিতে বাজারে বেড়ে চলছে ভোজ্যতেলের দাম। আমদানিকারকদের দাবি, ”আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দাম কমানোর সুযোগ তাদের হাতে নেই। তবে সরকার চাইলে ভ্যাট কমিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে ভোক্তাদের।”
এ অবস্থায় ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)।
গত দুই বছরে তেলের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। এরই মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে সরিষার তেলের দামও। বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৬৮ টাকা।
কেন তেলের দাম বাড়ছে?
সরকারি-বেসরকারি সংস্থার হিসাবে, দেশে ভোজ্যতেলের বছরে চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে ২১ দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে, যা ২০২০ সালে কিছুটা কমে। সে বছর ১৯ দশমিক ৭৫ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। এদিকে গেল বছর ২০২১ সালে ২১ দশমিত শূন্য ৩ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।
বিশ্ববাজারে পামওয়েল ও সয়াবিনের দাম লাগাতার বাড়তে থাকায় ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত এক মেট্রিক সয়াবিন আমদানিতে ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এতে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং সয়াবিন তেল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ১০০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের হাত বাঁধা দাবি করে ভ্যাট কমিয়ে তেলের দাম কমানোর সুযোগের কথা বলছেন আমদানিকারকরা।
সরিষার তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলেন, ”সয়াবিন তেলের দাম যেহেতু বেড়েছে, তাই সরিষার তেল বিক্রেতারা তো আর বসে থাকবেন না, তারাও দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাহিদামতো কোম্পানির কাছ থেকে আগের মতো তেল পাচ্ছি না।”
ভোক্তাদের স্বস্তি দিয়ে ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট কমানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে টি কে গ্রুপের ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন পরিচালক সফিউল আথহার তাসলিম বলেন, ”যেহেতু দাম দ্বিগুণেও বেশি হয়ে গেছে, তাহলে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সুতরাং সেটির সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্যাট কোনো রকম কমানো সম্ভব কি না। আমরা সে রকমই একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি।”
ইতোমধ্যে ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ”আমাদের ঠিক এ মুহূর্তে প্রতি লিটার তেলে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোক্তার পকেট থেকে চলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা একাধিকবার এনবিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আশা করছি, সরকার বা আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বিষয়টি অনুধাবন করে ভ্যাট কমানো বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। আমরা শুধু তাদেরকে জানাতে পারি। ভ্যাট কমানোর বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় তথা এনবিআরের।”
তবে নাভিশ্বাস ওঠা বাজারে ভোক্তা ব্যয় কিছুটা কমাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তেল ব্যবহারের পরামর্শ পুষ্টি ও খাদ্য বিশেষজ্ঞের।
খাবারে পরিমিত তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে পুষ্টি ও খাদ্য বিশেষজ্ঞ সামিয়া তাসনিম বলেন, ”তেল ব্যবহারে আমাদের একটু ভুল হয়ে থাকে। আমরা সবসময়ই খাবারে তেলের ব্যবহার বেশি করতে চাই। তেল প্রয়োজনের বেশি খেলে তার যে কোনো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তার কোলেস্টরল লেবেল বেড়ে যেতে পারে।”