এসএমইকে অর্থনীতির প্রাণ বলা হলেও এখনো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাবান্ধব হয়নি দেশের ব্যাংকিং খাত। আর এ জন্যই বরাদ্দ থাকার পরও কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না অর্থনীতির এই কারিগররা।
ব্যাংকের মাধ্যমে করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে জয়িতা ও এসএমই ফাউন্ডেশনের।
বাধাগুলো বিশ্লেষণ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ দেওয়ার পথ বের করার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
ইশরাত জাহান চৌধুরী। কাজ করেন পাটপণ্য নিয়ে। করোনাকালে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অর্থের দরকার হয়েছিল তার। ঋণের আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু পাননি। শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নেই উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি ঋণের জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু পাইনি। এমনকি আমার পরিচিত কেউ ঋণ পেয়েছেন–এমন কাউকেও দেখিনি।’
তার মতোই আবেদন করে এখনো প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পাননি অনেক উদ্যোক্তা। তাদের অভিযোগ, বড় ব্যবসায়ীদের মাপকাঠিতেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের হিসাব মেলাতে চায় ব্যাংকগুলো।
অনেকেই আবার অভিযোগ করেছেন, ব্যাংকগুলো সরকার-নির্ধারিত ৪ শতাংশ সুদহার না মেনে ৯ শতাংশ সুদ আদায় করছে।
তথ্য বলছে, করোনার ধাক্কা সামলাতে ২০২০ সালে ৮টি সংস্থার অধীন ৪ শতাংশ সুদহারে এসএমই খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ দেয় সরকার। এরই মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি পৌঁছে গেছে উদ্যোক্তাদের হাতে।
তবে, ব্যাংকের মাধ্যমে শতভাগ বরাদ্দ বিরতণকারী সংস্থা জয়িতা ও এসএমই ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞতা, ব্যাংকিং চ্যানেলে উদ্যোক্তার কাছে ঋণ পৌঁছাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাদের।
এ ব্যাপারে জয়িতা ফাউন্ডেশনের পরিচালক নিপুল কান্তি বালা বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তা অফিশিয়াল ডকুমেন্টগুলো মেনে চলেন না। এতে ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে নিরুৎসাহিত বোধ করে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে হলে আমাদের একটি বিকল্প সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। গতানুগতিক ব্যাংকিং ধারা অনুসরণ করে ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
এ কারণেই এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার আলাদা ব্যাংকিং নীতিমালা করার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছে যাতে করে সহজে ঋণ পৌঁছে এবং সহজে যাতে তারা ঋণ ফেরত দিতে পারে, সে রকম একটি নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।’
বছরের পর বছর ধরে উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। তারপরও এই করোনাকালে অর্থনীতিকে শক্তপোক্ত রাখতে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহযোগিতা করতে চেয়েও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হাতে অর্থ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, এই যে ব্যর্থতা, এখান থেকে উত্তরণে কি পথ বের করেন সংশ্লিষ্টরা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।