মুনাফা না হলেও পণ্যের মান ও সময়মতো তা বুঝিয়ে দিয়ে অল্প দিনেই দু-চারজন ক্রেতার সুনজরে পড়লেন চার ভাই। ফলে ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্যের এক ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়াদেশ পেলেন তাঁরা। তিন হাজার পিস পলো শার্ট। তারপর চার ভাইকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৯ বছরের ব্যবধানে পোশাকশিল্পের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অন্যতম তাঁরা।
গত অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে ছোট এক কারখানা থেকে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার দীর্ঘযাত্রার আদ্যোপান্ত আমাদের বললেন ডিবিএল গ্রুপের এমডি এম এ জব্বার। শুরুর গল্প বলতে গিয়ে এই ব্যবসায়ী স্মৃতিকাতর হলেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবসায় সফলতার চূড়ায় পৌঁছার পরও তিনি বললেন, দেশের জন্য আরও অনেক কিছু করা বাকি।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৯ সালে দেশে ফেরেন এম এ জব্বার। শুরুতে বাবার ব্যবসায় বসলেন। বছরখানেক পর সেটি মন দিয়ে করলেন। তারপর বাকি তিন ভাইয়ের সঙ্গে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা শুরু করলেন। সম্ভাবনা থাকায় তৈরি পোশাক ও চামড়ার ব্যবসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললেন।
শেষ পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতেই ছোট পোশাক কারখানা করার মনস্থির করলেন। তত দিনে পাশের আরেকটি বাসায় তাঁরা বসবাস করেন। চাচাতো এক ভাই পোশাকের ব্যবসায় জড়িত থাকায় কাজটি কিছুটা সহজ হলো।কারখানা চালুর পর ঠিকায় ক্রয়াদেশ আনা থেকে শুরু করে উৎপাদন—শেষ পর্যন্ত চার ভাই কঠোর পরিশ্রম করছেন। তবে দিনের পর দিন লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে একসময় হতাশা পেয়ে বসে তাঁদের।
পশ্চাৎমুখী শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তই ডিবিএলের ব্যবসা আজকের উচ্চতায় পৌঁছতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন এম এ জব্বার। হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমরা যখন কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগে গেলাম তখন অনেকেই বলেন, এত বিনিয়োগ কেন করছ? তোমরা কি বিনিয়োগের অর্থ তুলে আনতে পারবে? কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।
দীর্ঘদিন পোশাক সেলাই করার পর আমাদের মনে হয়েছিল, ক্রেতাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট।’ টি–শার্ট ও পলো টি–শার্টের মতো সস্তা পোশাক দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মধ্য ও উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদন করছে ডিবিএল। বাচ্চাদের পোশাকও করে তারা।
ডিবিএলের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে ৩৬ হাজার। এম এ জব্বার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করি।