দেখতে এটিএম কার্ডের মতোই। কিন্তু ব্যবহার করে হতো প্রশ্ন ফাঁসের কাজে। ব্যবহার করে হতো সিম। সংযোগ থাকে ক্ষুদ্র ব্ল-টুথ ইয়ার ফোন। দায়িত্বরতদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশেষ এসব ডিভাইস শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার হলে প্রবেশ করছে অসাধু চাকরিপ্রত্যাশীরা।
গোয়েন্দারা মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পেয়েছে।
দেখতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মতো হলেও আসলেই এটি একটি ডিভাইস। অসাধু উপায় অবলম্বনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা সব ডিভাইস শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে।
কানে থাকে ছোট্ট হেডফোন যা চোখে পরার মতো না। ডিভাইসটিতে সিমকার্ড ঢুকিয়ে মোবাইলের মত ব্যবহার করা যায়। শুক্রবার এসব ডিভাইস নিয়েই অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন কতিপয় পরীক্ষার্থী।
তিনটা থেকে শুরু হয় পরীক্ষা। প্রশ্ন আসে ৩ টা ২ মিনিটেই। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কেউ একজন প্রশ্নপত্রটির ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় সমাধানের জন্য। বাইরে থাকা চক্রটির সদস্যরা নয়টি প্রশ্নের সমাধানও করে ফেলেন। ততক্ষণে এ চক্রটির কয়েক সদস্য গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, কতগুলো স্মার্ট ওয়াচ যেগুলোতে হাতের ঘড়ির সঙ্গে নানা রকমের মেসেজ ওখানে টাইপ হয়ে চলতে থাকবে। এগুলো দিয়ে কখনো কথা বলাও যায় আবার কখনো কথা শোনা যায়। আর কতগুলো আছে একদম সুক্ষ্ম ইয়ারফোন যেটা কানে থাকবে আর একটা ছোট স্মার্ট কার্ডের মত ডিভাইস যেটা শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগানো থাকে যার ভেতরে একটা সিমকার্ড লাগানো থাকে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একদল লোক পরীক্ষার হল থেকে পরীক্ষা চলার সময়ে প্রশ্নটা বাইরে বের করে দেয়। এরপর তারা এই প্রশ্ন কপি করে নেই এবং বিষয় বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমাধান করেন।
চক্রটি কয়েক ধাপে কাজ করে। গ্রাম, শহর, উপশহর থেকে চাকরিপ্রার্থী সংগ্রহ করে একটি দল। এই দলে কাজ করে রুপা, রনিসহ ৪ থেকে ৫ জন। পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ ও তা সমাধান করে আরেকদল।
এ চক্রের এক সদস্য বলেন, ওদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকে যে সে লিখিত পরীক্ষায় টিকলে আমাদেরকে এতটাকা দিবে এবং কেউ যদি পুরো চাকরির যোগাযোগ এ আসে তাহলে এতটাকা দিবে।
এক ভুক্তভোগী বলেন, অডিটরে চাকরি দিতে চেয়েছিল। এজন্য আমার কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা চেয়েছিল।
গ্রেফতারকৃত ১০ জনের মধ্যে তিনজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও বাকিরা এর আগেও বেশকয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল।
পরীক্ষার হলে মোবাইলসহ বিশেষ ধরনের ডিভাইস নিয়ে কিভাবে চাকরিপ্রার্থীরা প্রবেশ করেছিল তাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।