দেশে চাল উৎপাদনের প্রধান সময় হচ্ছে বোরো মৌসুম। এ মৌসুমে দেশের অর্ধেকের বেশি চাল উৎপাদন করা হয়। বোরো মৌসুম মূলত পুরোটাই সেচ নির্ভর। সম্প্রতি ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্য পরিবহন ও সেচ খরচও আনুপাতিক হারে বাড়বে। সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে চুক্তির সময় পাম্প মালিক ও কৃষকদের মধ্যে বিরোধ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যানুযায়ী, দেশের ১ কোটি ২৩ লাখ কৃষক ডিজেলচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে সেচকাজ পরিচালনা করে থাকেন। এ সংখ্যক কৃষক প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ডিজেলচালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করে থাকেন। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উফশী, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাত মিলিয়ে আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। চলতি অর্থবছরে সেটি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেচের জন্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবারও বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা তৈরি করবে। বোরো ধানের আবাদ ছাড়াও সবজি, তেল, ডালজাতীয় খাদ্য ও দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হবে। এসব খাদ্য পণ্য উৎপাদনেও সেচের ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য বলছে, এ মৌসুমে কেবল ডিজেলের দাম বাড়ার কারণেই কৃষকে বাড়তি খরচ হিসাবে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। উৎপাদনের অন্যান্য খরচ মিলিয়ে এ খরচ এসে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা
এমন অবস্থায় সরকারকে শাখের করাতের সম্মুখীন হতে হবে। কৃষককে নায্য মূল্য দিতে হলে চালের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এতে করে সাধারণ মানুষের উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে কৃষক সুবিধা না পেলে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে সরকারকে চাল আমদানি করতে হবে। তাতেও বাড়তি খরচ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সৃষ্টি হতে পারে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। চলতি মাসেই তেলের দাম চার ডলার কমে ব্যারেল প্রতি দাড়িয়েছে প্রায় ৮১ ডলারের মতো। বিশেষজ্ঞরা বলছে, তেলের দাম বছর শেষে আরও কমবে। বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনলে সংকট থেকে সহজেই পরিত্রাণের পথ মিলবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।