২০০৯ সালের জুনে ব্যবসায়ী দিদারুল আলম চৌধুরীর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় শারমিন আক্তার রিমুর। প্রথম তিন বছর বেশ ভালোভাবেই কাটে তাদের সংসার। এরই মধ্যে ঘর আলো করে জন্ম হয় পুত্র দিলশান ও মেয়ে দিশার। কিন্তু দিন যত বাড়তে থাকতে সংসারে বাড়তে থাকে অশান্তি। ব্যবসায়ী দিদার ব্যবসায়িক কাজে প্রায় সময় থাকেন ঢাকায়।
এই সুযোগে বাসায় নিজের ফেসবুক বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মদের পার্টি ও বিভিন্ন সময় ফেসবুক বন্ধুদেরকে নিয়ে রাতদিনে ও বিভিন্ন সময় মদের আসর ও বিভিন্ন পার্টি করতো শারমিন। ছেলে দিলশান ও মেয়ে দিশা বাবাকে বিষয়টি জানানোর পরে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। এরই মধ্যে টিকটকে বিভিন্ন জন্যের সাথে আসক্ত হয়ে পড়েন গৃহবধূ শারমিন। অনেক নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হতে থাকে তার। এরই মধ্যে শোয়েব রানা নামের দুবাই প্রবাসী এক যুবকের সাথে শারমিনের সখ্যতা শুরু হয়।
অবস্থা এমন হয়ে যায় টিকটকে ভিডিও বানাতে বানাতে ছেলে মেয়েদের দেখভাল করার কথাও ভুলে যান শারমিন। খাবারের সময়ে খাবার চাইলে নিজের বাচ্চাদের করতেন মারধর। ফলে সন্তানরাই এখন সাক্ষ্য দিচ্ছেন মায়ের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে।
দিলশান ও দিশা জানায়, তাদের মা প্রায়ই তাদেরকে ঘরে রেখে বাইরে তালা মেরে চলে যেতেন। ফিরতেন ৫-৬ ঘন্টা পর।
শারমিনের ছেলে দিলশান বলেন ‘আমার আম্মু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমার আম্মু টিকটক করে এবং বাসায় একটা ছেলের সাথে ২৪ ঘন্টা কথা বলে কানে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলতো আমাদেরকে কোনো কেয়ার করতো না এইগুলো যখন আমি বাবাকে বলি তখন আমাদের উপর আরো ক্ষিপ্ত হয়। এই দিকে ছোট মেয়ে দিশা বলেন “টিকটিক নিয়ে মাম্মি এতোই ব্যাস্ত হয়ে পরেন আমাদের প্রতি কোনো খবর রাখতেন না। আমাদেরকে নানুদের বাসায় এবং বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়ে বিভিন্ন খারাপ পার্টি করতো। ”
পাত্তা দিতেন না স্বামী দিদারকেও। তবে সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে সবকিছুই সহ্য করে যান দিদার। তবে সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করে চলতি বছরের ১ জুন। সেদিন রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে শারমীন বহদ্দারহাট খাজা রোডের সাবানঘাটার বাসা থেকে বের হয়ে যান। অনেক চেষ্টা করেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এক সপ্তাহ পরে ফিরে আসেন শারমিন। এভাবে আর কোথাও যাবেন না, আত্মীয়-স্বজনের সামনে দেন মুচলেকা।
কিন্তু এরপরেও বদলাননি শারমিন। চলতে থাকেন নিজের ইচ্ছেমত। স্বামী দিদার এসবের প্রতিবাদ করলে ডিভোর্স দেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ স্বামী দিদারকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েও দেন শারমিন। অভিযোগ পরকীয়ায় লিপ্ত দিদার, এছাড়া মারধরও করেন তাকে। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে শারমিনের পরকীয়ার তথ্য। টিকটক বন্ধু শোয়েবের সাথেই পরকীয়ায় লিপ্ত হন শারমিন। এছাড়া স্বামী দিদারের অনুপস্থিতিতে বাসায় বিভিন্ন যুবকের আনোগোনাও দেখা যায়।
এদিকে, শারমিনের পাঠানো ডিভোর্স লেটারে ইতিমধ্যেই সাক্ষর করে দিয়েছেন দিদার। কিন্তু এখন দিদারকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন মামলার হুমকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করছেন শারমিন ও তার আত্মীয়-স্বজন।
এছাড়া দিদারকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিজের সাবানঘাটার বাসা থেকে তাকে বিতাড়িত করেন শারমিন। মামলার ভয়ে বাসা থেকে বের হয়ে নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বাসায় ঘুরছেন দিদার। এ ঘটনায় গত ৫ অক্টোবর চান্দগাঁও থানায় একটি জিডিও করেছেন তিনি।
স্বামী দিদার বলেন ‘এই মেয়েকে বিয়ে করে আমি দুটা সন্তান নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। টিকিটকের মাধ্যমে পরকিয়ায় জড়িয়ে যাওয়ায় আমার এই অবস্থা। আমার যে এই অবস্থা যে কেনো হলো আমি জানি না। আমার মা বাবা নেই এক বোন এবং এক ভাই আছে তারা অসুস্থ আমার এই দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি কোথায় যাবো আমি জানিনা।’
তিনি আরো বলেন ‘আমার বিয়ের আগে শারমিনের আগেও একটা বিয়ে হয়ে ছিলো ঘর সংসার করেছে এবং ৬ মাসের একটা বাচ্চা নষ্ট করেছিলো। তাছাড়া তার এতো বড় একটি ব্রেষ্ট টিউমারের কথা আমাকে জানাই নাই। আমি তবুও দুটো সন্তানের জন্য সমঝোতার মাধ্যমে সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু শারমিন সংসার করতে নারাজ ,সে বিশাল অংকের টাকা চেয়ে সংসার করতে চাইছেন না বলে জানিয়ে দেন। ‘
দিদার ও শারমিন দম্পত্তিকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা দফায় দফায় বৈঠক করেন।
জয়নগর হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী বলেন ‘দুই থেকে তিন বার বৈঠক করেছি আমরা। শারমিনের বাবাকে বলেছি শারমিনকে মাফ চেয়ে সমঝোতা করে সুন্দরভাবে সংসার করার। কিন্তু সবার কথা উপেক্ষা করে সংসার করতে নারাজ শারমিন।
‘সাবান ঘাটার স্থানীয় সর্দার আবছার আহমেদ বলেন ‘দোষে গুনে মানুষ।বেশ কয়েকজন জন সমঝোতার গিয়েছি এবং শারমিনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু শারমিন কারো কথা শুনতে নারাজ।শারমিনের পরিবারকে জানালেও তাদের কোনো পদক্ষেপ নেইনি এবং তারা সমঝোতার বিপক্ষের ।
এই বিষয়ে ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন এসরারুল হক এসরাল বলেন ‘এই বিষয়ে আরো বেশ কয়েকবার বেঠক হয় এবং আমাকে জানানো হলে আমি যাইনি। আমি বলেছিলাম বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেন না হলে আমাকে জানাবেন। আমাকে পরের সপ্তাহে আবার ফোন দেন। ওখানে এক পক্ষ উপস্থিত থাকলেও শারমিনের পক্ষ থেকে কেউ ছিলো না। আমি এক পক্ষকের কথা শুনে কোনো মন্তব্য করতে পারি না। তাছাড়া আমি মেয়ের বাবাকে ফোন করলে তিনি আমার সাথে দেখা করবে বললেও আর দেখা করেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচকতার কারণে এভাবেই প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে ঘর। এতে স্বামী স্ত্রীর চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের সন্তানরা।
যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই শারমিনের বক্তব্য নেয়ার জন্য আমরা যাই দিদারের সাবানঘাটার বাসায়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় চেয়ে প্রথমে দরজা খোলেননি শারমিন। পরে দরজা খুললেও ক্যামেরার সামনে কোন কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, তার আইনজীবীর সামনেই তিনি তার বক্তব্য দেবেন।
পৃথিবীর সব সম্পর্কের উপরে থাকে মা-সন্তানের সম্পর্ক। তবে স্বার্থের এ দুনিয়ায় সে সম্পর্কও এখন যেন অনেক ছোট। এদিকে স্ত্রী শারমিনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে দিদার এখন নিজের ঘরেই পরবাসী।