ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত এলাকার মামুনুর রশিদ নামে এক কৃষক মুরগির খামার করে এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। বন্ধুর পরামর্শ আর নিজ উদ্যোগে সৌখিনভাবে গড়ে তুলেছেন লেয়ার জাতের মুরগির খামার। তার এ খামারটি থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে পাঁচ হাজার ডিম।
মামুনুর রশিদ পেশায় একজন কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি বাড়তি লাভের আশায় বন্ধুর পরামর্শে বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন লেয়ার জাতের মুরগির খামার। মুরগির খামার করে এলাকার অনেকে হোচট খেলেও লাভবান ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার সামান্তবর্তী এলাকার দূর্লভপুর গ্রামের মামুনুর রশিদ।
কৃষি কাজের পাশাপাশি ২০০৭ সাল থেকে বাড়ির পাশে ব্রয়লার মুরগি লালন পালন শুরু করেন ৩ শ মুরগী নিয়ে।২০১৭ সালে গাইবান্ধা জেলার এক বন্ধুর পরামর্শ নিয়ে ব্রয়লার ছেড়ে লেয়ার মুরগির সৌখিন খামারের যাত্রা শুরু করেন। বাঁশ কাঠির তৈরি খাঁচায় রাখা মুরগিগুলোকে পরিস্কার পাত্রে নিয়মিত খাবার পরিবেশনে এখন কাজ করছেন অনেকে।
একটা সময় ওই উপজেলা সীমান্তের কাঁটাতার টপকিয়ে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পরলেও এখন মামুনুর রশিদের মত স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠায় অনেকেই কাজ পেয়ে খুশি।
বর্তমানে এই খামারে প্রতিদিন দশ জনের অধিক কাজ করছেন। মুরগি লালন পালনে তার খামারে এখন সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৬ শত। এ থেকে নিয়মিত ডিম উৎপাদন হচ্ছে পাঁচ হাজার। আর এসব ডিম ক্রয়ে জেলা ও উপজেলা থেকে খামারে ছুটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তার সফলতায় উদ্যোগী হচ্ছেন আশপাশে অনেকে।
মামুনুর রশিদ বলেন আমি সবার প্রথম ৩ হাজার ৫শত লেয়ার মুরগি দিয়ে এই খামারের যাত্রা শুরু করি।
এখন প্রায় ৬হাজার মুরগী রয়েছে আমার খামারে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এসব মুরগি একদিনের বাঁচ্চা কিনে এনে খামারে ১৪ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত রাখা যায়। পরে বাজারে মাংসের জন্য বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৫ হাজার ডিম উৎপাদন হয়।যা নিজ উপজেলার চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা উপজেলার চাদিহা পুরন করা সম্ভব হয় বলে মনে করি।
প্রতি শ ডিম ৮শত টাকা দরে বাজার পাইকারি বিক্রি করতে পারি।তাতে মাসে সকল ধরনের খরচ বাদ দিয়ে আমার ১ লক্ষ টাকার উপরে লাভ থাকে।তবে ডিমের বাজারের উপর নির্ভর করে। যদি ডিমের বাজার ভালো থাকে তবে আরো বেশি লাভ হয়।
খামারের বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন আগে আমরা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কাজ করতাম ঢাকায় যেতাম এবং কি পার্শ্ববর্তী বর্ডার এলাকা হওয়ায় সেখানে আমরা গরু আনা-নেওয়া সহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে জড়িত ছিলাম। কিন্তু মামুন ভাইয়ের এই খামার হওয়ার পর থেকে আমরা আর সেখানে যাইনা। আগে একটি খামার ছিল তখন আমাদের ৫ হাজার টাকা করে বেতন দিতো কিন্তু এখন দুইটি খামার হওয়ায় ১০ হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছে তাতে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে।পাশা পাশি নিজেরাও কৃষি কাজ করি।
খামারি মামুনুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন নিজ উদ্যোগে এগিয়ে গেলেও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মিলেনি পরামর্শ। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আরো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোগতা।তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন এতো বড় একটা খামার করেছি কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা কোন দিন আমার খামার পরিদর্শন করলেন না।
এটাই খুব দুঃখ জনক আমার জন্য।অপর দিকে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ অস্বীকার করে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করে বলেন, আমার নেকমরদ ইউনিয়নের লোকাল সার্ভিস প্রোভাইডার আছে ইরিন নাম তিনি সব সময় খোজ খবর রাখেন এবং এই করোনায় খামারিদের যে প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে সেটাও মামুনুর রশিদ কে দেওয়া হয়েছে।জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার হিসেবে রানীশংকৈল উপজেলায় ১ শত ১৩ টি ব্রয়লার ও ৫ টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে।
নাজমুল হোসেন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
Discussion about this post