রসালো ফল মাল্টা। খেতেও যেমন সুস্বাদু।
তেমনি রয়েছে এর অনেক উপকারিতা। শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে রক্ষা করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফলটি।
দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাল্টার চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনুকূল আবহাওয়া ও উপযোগী পরিবেশ হওয়ায় মাল্টা আবাদ বাড়ছে এ জেলায়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পতিত জমিও মাল্টা চাষের আওতায় এসেছে। এদিকে গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে এসে থেকে মাল্টা কেনেন।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারতসীমান্তবর্তী বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। প্রতিটি গাছেই রয়েছে ফলের ঝাঁক। তবে এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়াই মাল্টার আকারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে মাল্টা চাষ করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। এদিকে লাভজনক হওয়ায় নতুন নতুন চাষি মাল্টা আবাদ শুরু করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে জেলায় মাল্টার আবাদ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার ১৩৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে তিন হেক্টর বেশি। ১৮৮০টির মতো ছোট বড় বাগান রয়েছে।
দুই কানি জায়গা জুড়ে মাল্টা বাগান করেছেন সোহাগ ভূইয়া। তার বাগানে ১৬০টির মত মাল্টা গাছ রয়েছে। যার প্রতিটি শাখায় থোকা থোকা মাল্টা ধরে আছে। অধিক ফলনের কারনে মাল্টা ফলগুলো গাছ থেকেই মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। গাঢ় সবুজের মধ্যে হালকা হলদেটে ভাব। যেন স্বাদের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
কথা হয় বাগান মালিক সোহাগ ভূইয়ার সঙ্গে। তিনি দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, প্রথমে ৬০টি মাল্টা চারা দিয়ে বাগান শুরু করেছি। এখন আমার বাগানে ১৬০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। পাঁচ বছর হলো গাছের বয়স। সবগুলোতে পরিপূর্ণভাবে ফলন হয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা করছি। আশা করি, ভালো দাম পাব।
আরেক মাল্টা বাগানের মালিক আব্দুল আলীম দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, আমার বাগানে ১৩০টির মত মাল্টা গাছ রয়েছে। পরিচর্যা করতে আমার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার দেড় লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
জহির মিয়া দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমার বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে পাইকাররা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেছেন। এছাড়া অনেকে শখের বসে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে মাল্টা কিনছেন।
হাফিজুর রহমান দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, আমার বাগানে ১০০ গাছ রয়েছে। বারি মাল্টা-১ জাত বেশি। আমার নতুন বাগান। গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। বাগান করতে দুই লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তা গাছগুলো রোপণ করেছি। ফলন এলে লাভবান হবো।
বিজয়নগর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুহল আমিন খান দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, মাল্টা আসার পর থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। জৈবিক পদ্ধতির দিকে অগ্রসর করাচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার দৈনিক অর্থনীতিকে বলেন, এ বছর এ জেলায় ২৭০০ মেট্রিকটন মাল্টার আবাদ হয়েছে। আশা করছি, ২৭ কোটি টাকায় এসব মাল্টা বিক্রি হবে। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মনিটরিং করছি। মাল্টা চাষ জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা বিভিন্ন সময় প্রদর্শনী করে থাকি। এতে করে মাল্টার আবাদ দিন দিন বাড়ছে।