করোনাভাইরাসের ডেলটা ভেরিয়েন্টকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু মহামারি যেভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে, তার ধরনও বদলে গেছে। হঠাৎ করে অর্থনীতির বড় ধরনের পতন হচ্ছে না। বরং একটানা কিছুদিন ধরে প্রবৃদ্ধির হার কম থাকছে এবং মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকছে—স্ট্যাগফ্লেশন।
এদিকে শুধু আগস্ট মাসেই ভারতে কাজ হারিয়েছেন ১৫ লাখ মানুষ। দেশটির গবেষণা সংস্থা সিএমআইইর এই পরিসংখ্যান সামনে আসতেই সেখানে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।
সিএমআইইর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্টে ভারতের বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ঠিক আগের মাস জুলাইয়েও যা ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। কাজ না থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে সবখানেই। শহরে বেকারত্বের হার ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর গ্রামীণ এলাকায় ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এর মধ্যে মানুষের আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। ভাইরাসের সঙ্গে বসবাসের অভিজ্ঞতা গড়ে ওঠায় মানুষ এখন ভাইরাসের ভয়ে অতটা ভীত নয়। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হয়নি। বর্তমানে দেশটিতে রেস্তোরাঁয় মানুষের খেতে যাওয়ার হার ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ কম। অথচ হাসপাতালগুলো আক্রান্ত মানুষে ভরে যাচ্ছে। শুধু অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে, যেখানে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে, সেখানেই ক্রেতারা ঘরে থাকছেন।
সমস্যাটা সেখানেই হয়েছে। ধনী দেশগুলোর মানুষেরা কেনাকাটা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, কিন্তু ডেলটার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকটাই ব্যাহত। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লজিস্টিকের নেটওয়ার্ক ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গ্যাপ ও নাইকির মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো সরকারের সঙ্গে লবি করে যাচ্ছে, যাতে ভিয়েতনামকে আরও বেশি টিকা দেওয়া হয়। কারণ, তাদের সরবরাহের বড় একটি অংশ আসে ভিয়েতনাম থেকে। আর ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির বড় একটি অংশ সরবরাহ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। এসব দেশ থেকে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। অথচ প্রণোদনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলোর মানুষের হাতে এখন ভালোই টাকা আছে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে লকডাউন বা বিধিনিষেধের কথা ভাবতে পারছে না ধনী দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে এখন নতুন করে বিধিনিষেধ মানুষ মানতে চাইবে না। অস্ট্রেলিয়ার মানুষ ইতিমধ্যে লকডাউনবিরোধী মিছিল করেছে।
সেবা খাতের ঘুরে দাঁড়ানো
উৎপাদন খাত এখন পুরোপুরি সচল। পিছিয়ে আছে মূলত সেবা খাত। সেবা খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ২০১৯ সালের তুলনায় ৩ শতাংশ কম ব্যয় করেছে। অর্থাৎ মানুষ ব্যয় করতে রাজি। কিন্তু সরবরাহ–সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণে পর্যটন খাত আরও স্থবির হয়ে পড়ে, তখন প্রণোদনার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।
ভাইরাসের ভীতি মানুষের চলাফেরা কমিয়ে দেবে, এখন এ কথা বলা কঠিন। আর সরকার মানুষের চলাচল কমাতে বিধিনিষেধ আরোপ করলে তেমন ক্ষতি হবে না, সে কথাও বলা কঠিন। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে আবার বিধিনিষেধ দিতে হলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব হবে ব্যাপক। সেই সঙ্গে আছে উৎপাদন–সংকট। ফলে চ্যালেঞ্জ এখন দুই ফ্রন্টে।
Discussion about this post