হঠাৎ করেই বাজারে বেড়ে গেছে টিস্যুর দাম। প্যাকেটপ্রতি এক লাফে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে।
মিরপুরের কাফরুলের বাসিন্দা আনিসুর রহমান গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় দোকান থেকে হ্যান্ড টাওয়েল কিনতে গিয়ে দেখেন, প্যাকেটের দাম ৯৫ টাকা হয়ে গেছে। অথচ জুলাই মাসে তিনি ৭৮ টাকা দিয়ে হ্যান্ড টাওয়েল কিনেছিলেন। আর ২০ টাকার টয়লেট টিস্যু কিনলেন ৩০ টাকা দিয়ে।
হঠাৎ দাম এত বাড়ল কেন, খুচরা বিক্রেতা খোরশেদ আলমের কাছে জানতে চান আনিসুর রহমান। কিন্তু বিক্রেতা উত্তর দিতে পারেননি। টিস্যুর গায়ে সর্বোচ্চ খুচরামূল্য কত লেখা আছে, শুধু তা দেখিয়ে দেন।
মুদিদোকানের বিক্রেতা খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের টিস্যুর দাম হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ক্রেতারা প্রশ্ন করছেন, কিন্তু তাঁর কাছে কোনো জবাব নেই। আগে দাম বাড়লে ১-২ টাকা বাড়ত। এবার এক লাফে প্যাকেটপ্রতি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
১১ আগস্ট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলেছে। এ ছাড়া শপিং মল, মার্কেট, দোকানপাট খোলা থাকছে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। খুলে গেছে হোটেল-রেস্তোরাঁও। ফলে টিস্যুর ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বসুন্ধরা সাদা টয়লেট টিস্যুর প্রতি প্যাকেটের দাম ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা, রঙিন টয়লেট টিস্যুর দাম ২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা, হ্যান্ড টাওয়েল প্রতি প্যাকেট ৭৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা, ফেস টিস্যুর প্যাকেটের দাম ৬২ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭২ টাকা।
বাজারে বসুন্ধরার সব ধরনের টিস্যু ও কাগজজাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এক কোম্পানির দাম বাড়ায় অন্য কোম্পানিগুলোও দাম বাড়ানোর পথে হাঁটছে। বসুন্ধরার পাশাপাশি বাজারে ফ্রেশ, সোনালি, বাংলা, ফেসহ বেশ কিছু ব্র্যান্ডের টিস্যু বিক্রি হয়। এর মধ্যে ফ্রেশের হ্যান্ড টাওয়েলের দাম বেড়েছে।
তবে কোম্পানিটির অন্য কোনো টিস্যুর দাম বাড়েনি। এ ছাড়া সোনালি, বাংলা ও ফে টিস্যুর দাম বাড়েনি।
কারওয়ান বাজারের বসুন্ধরা টিস্যুর পরিবেশক রহমত অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মো. লিটন বলেন, ‘নতুন করে টিস্যুর দাম বেশ বেড়েছে। তবে বাজারে প্রভাব পড়ছে সম্প্রতি। কারণ, আমাদের কাছে আগের দামে কেনা বেশ কিছু পণ্য ছিল। সেগুলো আমরা এত দিন আগের দামেই বিক্রি করেছি। এখন নতুন টিস্যু বাজারে যাচ্ছে, তাই দাম বাড়তি।’
কারওয়ান বাজারে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ টিস্যুর পরিবেশক জামাল ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি হারিছুর রহমান বলেন, কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছে দাম বাড়বে। নতুন পণ্য এলেই বোঝা যাবে দাম কত বেড়েছে।
বাজারে ফেস টিস্যু, পকেট টিস্যু, কিচেন টাওয়েল, টেবিল ন্যাপকিন, টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল, ওয়ালেট টিস্যু, ক্লিনিক্যাল বেড শিট পাওয়া যায়। দেশে ২৫টির মতো কোম্পানি টিস্যু উৎপাদন ও আমদানি করে। টিস্যু উৎপাদন করে বসুন্ধরা, মেঘনা, কল্লোল, জননী, বাংলা টিস্যুসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি।
কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে টিস্যুর কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বেড়েছে আমদানি খরচও। তাই কিছুটা দাম সমন্বয় না করলে কোম্পানিগুলোকে লোকসান গুনতে হবে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর টিস্যুর ব্যবহার বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বারবার হাত ধোয়ার পর টিস্যু ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাসার পাশাপাশি এখন বেশির ভাগ অফিসে আগের চেয়ে বেশি টিস্যু ব্যবহৃত হচ্ছে।
Discussion about this post