এক লাখ গ্রাহকের প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ শপের দুটি ব্যাংক হিসাব খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। গত ২০ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, সেই দুটি ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে আছে ৩ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৬ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিবরণীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের একটি হিসাবে জমা পড়ে ৬২০ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার ৭২৯ টাকা। এই সময়ের মধ্যে ৬২০ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৯২ টাকা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে ওই হিসাবে টাকা জমা আছে ২২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩৭ টাকা।
ই-অরেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা হিসেবে কাগজপত্রে নাম আছে সোনিয়া মেহজাবিনের। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে প্রাইভেট কোম্পানি দাবি করে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরদাতার মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং মেহজাবিনও। অথচ পুলিশের তদন্ত ও মেহজাবিনের আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, ই-অরেঞ্জ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
ই-অরেঞ্জের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে গত ১১ মে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে সোনিয়া মেহজাবিন জানান, তিনিই এখন ই-অরেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ গ্রেপ্তার হওয়ার পর সোনিয়া মেহজাবিন ও তাঁর স্বজনেরা দাবি করে আসছেন, তিনি কোম্পানির মালিকানা বীথি আক্তারের কাছে হস্তান্তর করেছেন গত এপ্রিল মাসে। অবশ্য ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, সোনিয়া মেহজাবিনের হিসাবে গত ২৩ মার্চ ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
সোনিয়া মেহজাবিনের আইনজীবী মামুনুর রশীদ দৈনিক অর্থনীতিকে কাছে দাবি করেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায় মেহজাবিন কিংবা তাঁর স্বামীর নেই। কারণ, এপ্রিলে বীথি আক্তারের কাছে প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুলশান থানায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বীথি আক্তারকে খুঁজছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক লাখ গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায় এড়াতে যদি প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর দেখানো হয়, সেটি তদন্তে উঠে আসবে। ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাবে জমা পড়া গ্রাহকের টাকা যার হিসাবে পাওয়া যাবে কিংবা যে বা যারা আত্মসাৎ করেছে, তাদের সবাইকে ধরা হবে।
১৭ আগস্ট করা গুলশান থানায় করা মামলার বাদী তাহেরুল বলছেন, বীথি আক্তার সোহেল রানার স্ত্রী বলে তিনি শুনেছেন। তবে সোহেল রানা তা অস্বীকার করেছেন।
কে এই অদিতি
ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, অদিতি নামের এক নারী ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে সব থেকে বেশিবার টাকা উত্তোলন করেছেন। কয়েক কোটি টাকা তিনি ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে তুলে নিয়েছেন। এ ছাড়া ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে অরেঞ্জ বাংলাদেশ, রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালসহ অনেকগুলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবেও বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়।
মামলার বাদী তাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কষ্টের টাকা ই-অরেঞ্জের হাতে তুলে দিয়ে মাসের পর মাস লক্ষাধিক গ্রাহক পণ্য না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। টাকা আদায়ের জন্য ই-অরেঞ্জের সোনিয়াদের নামে গ্রাহকের পক্ষে মামলা করেছি। এখন আমাকেও হয়রানির হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। হয় আমাদের পণ্য দেওয়া হোক, তা না হলে আমাদের আসল টাকাটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পদ-পদবি না দেখে দ্রুত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার। নিশ্চয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেই ব্যবস্থা নেবেন। আর যাঁরা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের যাতে শাস্তি নিশ্চিত হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
Discussion about this post