সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে অচলাবস্থার কারণে ভয়াবহ জট তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের রফতানি পণ্য পরিবহনে।
এ ছাড়া কনটেইনার সংকট ও বড় জাহাজ কম আসা, আমদানির সঙ্গে ভারসাম্য না থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রফতানি বাণিজ্যে। এ কারণে রফতানিকৃত পণ্য বোঝাইয়ের কাজে নিয়োজিত অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোর (আইসিডি) ভেতরে-বাইরে পণ্যের স্তূপ জমে গেছে ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) হিসাব মতে, বর্তমানে ১৯টি ডিপোর ধারণ ক্ষমতা আট হাজার টিইইউস কনটেইনার । সেখানে প্রায় ১৪ হাজার টিইইউস রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার আটকা আছে । অথচ স্বাভাবিক সময়ে ডিপোগুলোতে গড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টিইইউস রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার থাকে । ধারণক্ষমতা না থাকায় এখন ডিপোগুলোর ভেতরে-বাইরে রফতানি পণ্যের স্তূপ জমে গেছে । এ ছাড়াও প্রত্যেক ডিপোর সামনে খালাসের জন্য দীর্ঘ লাইনে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে দুই-তিনদিন অপেক্ষায় থাকছে ।
জানা গেছে, কারখানা থেকে পণ্য উৎপাদনের পর বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা সাপেক্ষে প্রথমে ডিপোগুলোতে আসে । এরপর সেখানে বিদেশি ক্রেতার প্রতিনিধিদের (ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার) হাতে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া হয় । প্রতিনিধিরা পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করার ব্যবস্থা করেন । একই সময়ে শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষ করে ডিপো থেকে বন্দরে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেয়া হয় কনটেইনার ।
রফতানিকারকরা জানান, সাধারণত আইসিডি থেকে জাহাজে তোলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো কনটেইনার পাঠাতে দুই-তিনদিন লাগে । বর্তমানে সেটি ১০ দিন বা তারও বেশি লাগছে । এ ছাড়াও পুরো রফতানি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ দিন বেশি সময় লাগছে বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য বুঝিয়ে দিতে । ফলে কারখানাগুলো নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে । তা ছাড়া সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে না পারায় কারখানার উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ।
আবার সমুদ্রবাণিজ্য একটি বন্দরের সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত । সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালেশিয়ার বন্দরগুলোতে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, শিগগিরই সেটি কাটার সম্ভাবনা নেই । ইউরোপ-আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে পণ্য রফতানি হয়েছে । বিপরীতে আমদানি হয়েছে কম । করোনা মহামারির পর চীনের রফতানি বাণিজ্যেও গতি এসেছে৷ তারা প্রচুর পণ্য রফতানি করেছে । এ কারণে কনটেইনার এবং জাহাজের সংকট তৈরি হয়েছে । সবমিলিয়ে দিন দিন দেশে রফতানি পণ্য পরিবহনে ভয়াবহ জট তৈরি হতে যাচ্ছে ।