শেষ পর্যন্ত নগরবাসীর শঙ্কা সত্যিই হলো। ভারী বৃষ্টিতে ডুবল নগরের সিংহভাগ এলাকা। তীব্র জলাবদ্ধতার কবলে পড়লেন স্থানীয়রা। থাকতে হলো ছয় ঘণ্টারও অধিক সময় পানিবন্দি। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পথচারীদের যেতে হলো গন্তব্যে। গতকাল রোববার সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। সময়ের সাথে সাথে বাড়ে বৃষ্টির গতিও। ১২টা পর্যন্ত একটানা ভারী বর্ষণের পর কমে আসে গতি। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তবে সকালের বৃষ্টিই ছিল যত দুর্ভোগের কারণ। বৃষ্টির সময় ছিল না জোয়ার। তবুও কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানিতে নগরবাসীর দুর্ভোগ হয়ে ওঠে অসহনীয়। রাস্তাঘাট তো ডুবেছে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ির নিচতলায় পানি ঢোকে। হাসপাতাল থেকে মার্কেট সব জায়গা ছিল পানিতে সয়লাব। সাধারণত বৃষ্টি ও জোয়ার এক সাথে হলে তীব্রতা বাড়ে জলজটের। কিন্তু গতকাল জোয়ার ছাড়াই হয়েছে জলাবদ্ধতা। মেগা প্রকল্পের জন্য খালে বাঁধ ও রাস্তা করে পানি চলাচলের পথ হওয়া ছিল এর কারণ। যদিও পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার দাবি করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ : গতকাল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ তিন ঘণ্টায় ৪৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এছাড়া ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার, ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর আগে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় হয়েছে ২ দশমিক ৪ মিলিমিটার।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একইভাবে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বিকাল ৩টায় ৭৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার, দুপুর ১২টায় ৭৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার, সকাল ৯ টায় ৩০ দশমিক ৮ মিলিমিটার ও সকাল ৬টায় ৩৩ দশমিক ৪ মিলিমটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এদিকে গতকাল বিকেল ৪টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আহাওয়া অফিসের ভারী বর্ষণ সংক্রান্ত সর্তকবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুর সংমিশ্রণের ফলে চট্টগ্রাম ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিমি বা তার বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ও পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ড. মু শহিদুল ইসলাম বলেন, আজ অস্থায়ী দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব অথবা দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৮ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এলাকাভিত্তিক পানির চিত্র : সকাল সাড়ে ১২টার দিকে বহদ্দারহাট মোড়ে দেখা গেছে পানির তীব্র স্রোত। বহদ্দারহাট থেকে কাপাসগোলা হয়ে তেলিপট্টির আগ পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। এখানে পানির জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে লোকজন হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। চকবাজার কাঁচাবাজারের সামনেও ছিল বেহাল দশা। চক সুপার মার্কেটে পানি ঢুকে গেছে। কাঁচাবাজার থেকে রাহাত্তারপুল সড়কও তলিয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন দোকানপাটে পানি ঢোকে।