বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
এবারের বাজেট মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬ শতাংশ।এটি দেশের ৫০ তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২১ তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তৃতীয় বাজেটে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন মান উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘতর প্রভাব এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি হতে পুনরুদ্ধারের কৌশল বিবেচনায় নিয়ে এবং বিশেষভাবে স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়ােজন মেটানাে এবং ভ্যাকসিন প্রয়ােগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মােকাবিলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়েছে।
এর আগে, দুপুরে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম ব্লকের দ্বিতীয় তলায় মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাজেট অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেন।
পরে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে খয়েরি ব্রিফকেস হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এই ব্রিফকেসেই ছিল ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট।
‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনার কারণে কমসংখ্যক সংসদ সদস্যের (এমপি) উপস্থিতিতে দেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। যারা উপস্থিত রয়েছেন তাদের আসতে হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেটের তুলনায় ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৬.২ শতাংশ। এই হার গত বাজেটে ছিল ৬.১ শতাংশ।
ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস হতে ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা এবং
অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত হতে আসবে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। জাতীয় সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন করা হয়েছে।
Discussion about this post