হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্বর্ণ চোরাচালানের বড় ঘটনা ধরা পড়েছে। চোরাচালানের ঘটনা ঘটে দেশের স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোয়ও। এ অবস্থায় চোরাচালান প্রতিরোধে এবং আমদানি-রফতানিতে আরো স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান সক্ষমতার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য দেশের প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ ১০টি শুল্ক স্টেশনে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার বসাতে যাচ্ছে এনবিআর।
জানা গেছে, যাত্রী সংখ্যা, প্রয়োজনীয়তা, স্ক্যানার স্থাপনযোগ্য ভবন, অবকাঠামো সুবিধা প্রভৃতি বিবেচনার ভিত্তিতে স্টেশনগুলোয় এসব স্ক্যানার স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে গত ৩ মে ব্যাগেজ স্ক্যানারগুলো স্থাপনের স্থান নির্ধারণ বিষয়ে এক অভ্যন্তরীণ বৈঠক করে এনবিআর। বৈঠকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত তামাবিল স্থল কাস্টম স্টেশন; কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত আখাউড়া স্থল কাস্টমস স্টেশন; যশোর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত দর্শনা (জয়নগর) স্থল কাস্টম স্টেশন; রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত সোনামসজিদ স্থল কাস্টমস স্টেশন; খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত ভোমরা স্থল কাস্টমস স্টেশন এবং রংপুর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাভুক্ত হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থল কাস্টমস স্টেশনে একটি করে আধুনিক ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ১০টি ব্যাগেজ স্ক্যানার কেনার পাশাপাশি একটি হিউম্যান বডি স্ক্যানার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। হিউম্যান বডি স্ক্যানার কেনার ক্ষেত্রে দপ্তরগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোয় (টিওঅ্যান্ডই) উল্লেখ না থাকায় একটির বেশি বডি স্ক্যানার কেনার উদ্যোগ নেয়া যায়নি। এসব স্ক্যানার কেনার জন্য এরই মধ্যে পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।
বৈঠক সূত্র আরো জানায়, ক্রয় প্রক্রিয়াধীন একটি হিউম্যান বডি স্ক্যানার (যা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, রাজশাহীর টিওঅ্যান্ডইভুক্ত) প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা হবে। তবে ঢাকা কাস্টম হাউজ তাদের টিওঅ্যান্ডইতে হিউম্যান বডি স্ক্যানার অন্তর্ভুক্তির পর ক্রয় ও স্থাপন সাপেক্ষে বডি স্ক্যানারটি রাজশাহী কমিশনারেটকে ফেরত দিতে হবে।
রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, স্ক্যানার ব্যবহারের ফলে অবৈধ পণ্য সহজে শনাক্ত করা যাবে। একই সঙ্গে শুল্ক ফাঁকি কমবে। স্ক্যানার মেশিন বসানো হলে চোরাচালানও কমবে। লাগেজ ব্যবসায়ীদেরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে কাস্টসম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এতে বন্দরের পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে।
দেশের অন্যতম স্থল শুল্ক স্টেশন সাতক্ষীরার ভোমরা। বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রফতানি হয়। তবে এখন পর্যন্ত এখানে স্ক্যানার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যদিও এজন্য তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী বিভাগীয় কমিশনার আমির মামুন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ভোমরায় ব্যাগেজ স্ক্যানার আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্ক্যানারটি আসতে সময় লাগবে। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্ক্যানার স্থাপনের জায়গা দেখে গেছে।
তিনি আরো বলেন, স্ক্যানার থাকলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়াটা দ্রুত হয়। কোন ব্যাগের ভেতরে কী আছে সেটা দ্রুত দেখে ফেলা যায়। তবে এ মুহূর্তে স্ক্যানার না থাকায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কারণ আমাদের এ বন্দর দিয়ে সীমিত পরিসরে পণ্য আসে। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্ক্যানার নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার কেফায়েত উল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের সীমান্ত দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকে। ব্যাগেজ স্ক্যানার না থাকার কারণে আমাদের প্রতিটি ব্যাগ ধরে ধরে চেক করতে হয়। এটা অনেক সময়সাপেক্ষ। তবে সম্প্রতি বুড়িমারীসহ মোট ১০টি শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এখানকার কাস্টমস প্রক্রিয়াটা মসৃণভাবে সম্পন্ন করা যাবে।
Discussion about this post